ডিজিটাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নতুন গাইডলাইন জারি করেছে কেন্দ্র। আর সেই গাইডলাইনের সমালোচনা করে এবার সরব হল দেশের এডিটর্স গিল্ড। কেন্দ্রের জারি করা গাইডলাইন প্রচার মাধ্যমের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরোপ। এই ভাবেই গাইডলাইনের সমালোচনা করে অবিলম্বে তা খারিজ করতে আবেদন জানিয়েছে এডিটর্স গিল্ড। ফ্রি মিডিয়ার কাজে ভারতীয় সংবিধানের দেওয়া রক্ষাকবচ কখনই তুলতে পারে না সরকার। নতুন আইন প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। স্বাধীন ভাবে প্রচার মাধ্যমের কাজে অহেতুক নজরদারি চলবে। কেন্দ্রের উদ্দেশে জারি করা বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।
এদিকে, ২৫ ফেব্রুয়ারি সোশাল মিডিয়া আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নজরদারি চালাতে নতুন গাইডলাইন সামনে আনল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক এই গাইডলাইন সামনে এনেছে। শুধু ওটিটি বা সোশাল মিডিয়া নয়, ডিজিটাল মিডিয়াও এই গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হবে এই নির্দেশিকা। এক্ষেত্রে গোপনীয়তা আপস হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে একটা অংশ। সোশাল মিডিয়াতে বিতর্কিত বার্তালাপের উৎস সন্ধানে সরকারি চাপে প্রয়োজনে ভাঙা হতে পারে এনক্রিপশন। এমনটাই আশঙ্কা তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।
এ প্রসঙ্গে এদিন মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেন, ‘আমরা কোনও নতুন আইন আনিনি। বর্তমানের আইনের অধীনে কাছু গাইডলাইন সামনে এনেছি। আমাদের বিশ্বাস মাধ্যমগুলো এই গাইডলাইন মেনে চলবে। স্বনিয়ন্ত্রিত ভাবে এই গাইডলাইন পালন করানোই সরকারের লক্ষ্য।’
নতুন নির্দেশিকায় সোশাল মিডিয়াগুলোকে সিসিও বা চিফ কম্প্লায়েন্স নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কো-অর্ডিনেটর নিয়োগে জোর দেওয়া হয়েছে। যৌনগন্ধীযুক্ত কনটেন্ট নিয়ে বিতর্ক উঠলে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে হবে। বিতর্কিত পোস্ট বা কনটেন্ট নিয়ে সরকার আপত্তি তুললে, সেটাও সরাতে হবে সোশাল মিডিয়াগুলোকে। একই ভাবে কনটেন্ট নির্ভর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নজরদারির ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য। এদিন জানিয়েছে, মন্ত্রকের একটি সূত্র।
জানুয়ারি মাসে মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছিল সইফ আলি খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ (Tandav)। হিন্দুধর্মকে অপমানের অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদের ঝাণ্ডাধারীরা রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলেন ওয়েব সিরিজের নির্মাতাদের। তবে মাস ঘুরলেও সেই বিতর্কের রেশ এখনও থামেনি। এবার ‘তাণ্ডব’ কাণ্ডে আমাজন প্রাইমের (Amazon Prime India) এক মহিলা কর্ণধারকে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে জেরা করল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ।
ওয়েব সিরিজে জিশান আয়ুব অভিনীত এক দৃশ্যে শিবের উল্লেখ ছিল। তাতেই আপত্তি তুলেছিলেন গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতা-মন্ত্রী তথা সমর্থকরা। তাঁদের দাবি, ‘তাণ্ডব’-এ হিন্দুধর্মের দেবদেবীদের নিয়ে বালখিল্য করা হয়েছে। অতঃপর এই ওয়েব সিরিজকে নিষিদ্ধ করা হোক। নেটদুনিয়ায় সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় যখন তুঙ্গে, তখন পরিচালক আলি আব্বাস জাফর এক বিবৃতি জারি করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। আমাজন প্রাইমের তরফেও সিরিজের আপত্তিকর দৃশ্য ছেঁটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে নতিস্বীকার করেও লাভ হয়নি। তারপরও একাধিক রাজ্যের পুলিশ দফতরে মামলা রুজু করা হয়েছে আমাজন প্রাইম এবং সিরিজের অভিনেতা, নির্মাতাদের বিরুদ্ধে। এমনকী সইফ আলি খান (Saif Ali Khan) ও মহম্মদ জিশানকে হুমকির শিকারও হতে হয়েছিল।