অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড ভিভিআইপি কপ্টার মামলায় চতুর্থ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিল এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। বৃহস্পতিবার দিল্লির বিশেষ আদালতে দাখিল করা ওই চার্জশিটে বলা হয়েছে, "টাকা দেওয়া হয়েছিল প্রতিরক্ষা দফতরের আধিকারিক, আমলা, সংবাদকর্মী এবং শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের।"
ইডির চার্জশিটে ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৯-এর অক্টোবর মাসের মধ্যে অভিযুক্ত মিডলম্য়ান ক্রিশ্চিয়ান মিচেল জেমস বেশ কয়েকবার নথি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "শ্রীমতী গান্ধী এই চুক্তির পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই সব কাগজ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে বেশ কিছু রাজনৈতিক এলিট প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সহায়তায় ক্রমাগত অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডকে সহায়তা করে গেছেন... অর্থমন্ত্রী এবং তাঁর উপদেষ্টাদের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য লবি করে গেছেন।"
চার্জশিটের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, প্রেরিত একটি নথিতে লেখা ছিল "এ) সপ্তাহের গোড়া ইতালিয় মহিলার ছেলের ব্যাপারে বৈঠক... ভদ্রলোক নিশ্চিত করেছেন ওই ছেলেই পরের প্রধানমন্ত্রী হবে এবং দলে তার ক্ষমতা দিন দিন বাড়বে। অর্থমন্ত্রী এই ছেলের ক্রমাগত উত্তরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন।"
ইডি আদালতকে এও বলেছে যে "ক্রিশ্চিয়ান মিশেল জেমসের বক্তব্য় অনুযায়ী এপি মানে আহমেদ প্যাটেল এবং ফ্যাম মানে ফ্যামিলি।"
প্রেরিত আরেকটি নথিতে একটি "আহরণপত্র" "স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক,বিদেশমন্ত্রক, অর্থমন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী, এই পাঁচ ক্যাবিনেট সদস্য এবং দলের নেতাকে" পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে "এবং অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ছাড়া কারোরও কোনও অসুবিধে নেই।" একটি কথোপকথনের উল্লেখও করা হয়েছে চার্জশিটে যেখানে বলা হয়েছে, "তাঁর সচিব" এবং "পার্টি নেতার মধ্যে কথা হবে এবং আমরা আশা করি তাঁকে শান্ত করা যাবে।"
এই চার্জশিট বিশেষ বিচারক অরবিন্দ কুমারের আদালতে পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তালিকায় নতুন অভিযুক্তদের নাম যোগ করা হয়েছে। এর ফলে মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ও কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪১-এ। নয়া নামগুলির মধ্যে রয়েছে ডেভিড নাইজেল ও জন সিমস। ইডির দাবি এরা মিচেলের ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। একই সঙ্গে উঠেছে এঁদের কর্তৃত্বাধীন দুটি কোম্পানি মেসার্স, গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড এবং মেসার্স গ্লোবাল সার্ভিসেস।
ইডির সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের সমন পাঠানো হবে কিনা আদালত আগামী ৬ এপ্রিল তা স্থির করবে।
ইডি-র চার্জশিটে বলা হয়েছে, অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড যে অর্থ প্রদান করেছে, তা চুক্তির অঙ্কের অন্তত ১২ শতাংশ। দুজন মিডলম্যানের মাধ্যমে ৭০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা হয়েছে। এই দুই মিডলম্যান বলতে মিচেল এবং আরেক অভিযুক্ত ব্যবসায়ী গুইডো হাশকের কথা বলা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, "বাজেট শিট অনুযায়ী, ৩০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়া হয়েছে এয়ার ফোর্সের আধিকারিক, আমলা এবং রাজনীতিবিদদের। ক্রিশ্চিয়ান মিশেল জেমস বাজেট শিটে উল্লিখিত আরও কিছু বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।"
চার্জশিটে সাংবাদিক রাজু সান্থানামের ছেলে অশ্বিন সান্থানামকে ২,০৫,৮৬০ ইউরো দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিচেলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, "অশ্বিনকে অর্থ প্রদান বা ঋণ দেওয়া হয়েছে বন্ধুপুত্রকে সাহায্য হিসেবে। ওঁর সঙ্গে ভিআইপিদের কোনও সম্পর্ক আছে এমন ভাবা ভুল।" চার্জশিটের এই বিষয়ে সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য রাজু সান্থানামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
নিজের দলের নেতাদের এই সব নামোল্লেখ উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস বলেছে, "এসবই ভোটের সস্তা গিমিক।" কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, সস্তা একটি অতিরঞ্জিত চার্জশিটের একটি অবিশ্বাসযোগ্য পৃষ্ঠা ফাঁস করে মোদী সরকারের অনিবার্য পরাজয়ের সম্ভাবনা থেকে নজর ঘোরাতে চাওয়া হচ্ছে। ইডি-র পুরো নাম এখন ইলেকশন ধাকসোলা।"
Read the Full Story in English