গত ১ জানুয়ারির ভীমা কোরেগাঁও হিংসার আগের দিন এলগার পরিষদের সভা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত ৫ অ্যাক্টিভিস্টের গহবন্দিত্বের মেয়াদ বাড়ল। আগামী ১২ তারিখ পর্যন্ত তাঁদের গৃহবন্দি রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন শুনানির সময়ে মুখ্য বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ ব্যাপারে পুনের পুলিশ কমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন, সে নিয়ে ক্ষোভ পর্কাশ করে বলেছেন, পুলিশ কমিশনার আদালত সম্পর্কে কুতসা করেছেন।
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মহারাষ্ট্র পুলিশ এ নিয়ে যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন সে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে পুলিশকে দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিতে বলেছেন। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষের কৌঁশুলি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার উদ্দেশে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, "আপনি আপনাপ পুলিশ অফিসারদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে বলুন। বিষয়টা আমাদের সামনে রয়েছে আর আমরা কোনও পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে শুনতে চাই না যে আমরা ভুল করছি। "
আরও পড়ুন, এলগার পরিষদ কাণ্ডে গ্রেফতার পাদ্রি, আইনজীবী, অধ্যাপক, কবি
তবে পুলিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে তথ্য দিতে পারবে কি না সে সম্পর্কিত কোনও নির্দেশিকা দিতে আদালত রাজি হয়নি।
অন্যদিকে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আদালতকে বলেছেন, পুনে পুলিশ যে সব জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে সেগুলি পরীক্ষা করলেই আদালত বুঝতে পারবে যে ধৃতরা কতটা ক্ষতিসাধন করতে পারত। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ধৃতদের শুধ গৃহবন্দি করে রাখলে মামলার তদন্তের ক্ষতি হতে পারে।
সরকার পক্ষের তরফে আরও বলা হয়েছে, অ্যাক্টিভিস্টদের মতবিরোধ প্রকাশ করার জন্য় গ্রেফতার করা হয়েছে, এ কথা ঠিক নয়। একই সঙ্গে রোমিলা থাপারসহ আবেদনকারীরা এই মামলায় বহিরাগত বলেও জানানো হয়েছে সরকারের তরফে।
এ প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালত রোমিলা থাপারদের মতামত জানতে চেয়েছে। আদালতের জিজ্ঞাসা, একটি ফৌজদারি মামলায় তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না।
পুনেতে এলগার পরিষদের সভার আয়োজন করার অভিযোগে ভারভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেইরা, গৌতম নওলাখা ও ভার্নন গনজালভেজকে গত মাসে গ্রেফতার করেছে পুনে পুলিশ। হানা দেওয়া হয়েছে দিল্লি, ফরিদাবাদ, মুম্বই, গোয়া, হায়দরাবাদ ও রাঁচিতে।
মহারাষ্ট্র সরকারকে এর আগে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, ধৃত ৫ জনকে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত গৃহবন্দি রাখতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, "মত বিরোধ গণতন্ত্রের সেফটি ভালভ, তা অনুমোদন না করা হলে প্রেশার কুকার বার্সট করে যাবে।"
আরও পড়ুন, এলগার পরিষদ কাণ্ডে বাংলার বিদ্বজ্জনদের হিরণ্ময় নীরবতা
এর আগে এলগার পরিষদের সভা আয়োজন করার ব্যাপারে মাওবাদীদের সহায়তা করার অভিযোগে পুলিশ সোমা সেন, রোনা উইলসন, সুধীর ধাওয়ালে, আন্তাচি চালওয়াল, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং ও মহেশ রাউতকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে 'রাজীব গান্ধীর কায়দায় নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার চক্রান্ত' করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
আদালতের বুধবারের নোটিসের প্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য, ধৃতেরা যে নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।
পাঁচ অ্যাক্টিভিস্ট ও আইনজীবীকে মতানৈক্য বা মতাদর্শগত পার্থক্যের জন্য গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়ে হলফনামা দিয়েছেন পুনে পুলিশের অ্যাসিস্ট্য়ান্ট কমিশনার শিবাজী পণ্ডিতরাও। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চালাতে গিয়ে যেসব জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে এই পাঁচজনকে।