এলগার পরিষদের অনুষ্ঠানে মাওবাদী যোগের হদিশ পেতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মী ও আইনজীবীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির পর বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুনে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে এই হানাদারি শুরু হয়ে। পুনেতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় এলগার পরিষদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত তিনমাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এ ধরনের গ্রেফতারির ঘটনা ঘটল।
পুলিশের দাবি, ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই সভায় যেসব ভাষণ দেওয়া হয়েছিল, তার জেরে পুনে ও সংলগ্ন এলাকায় পরের দিন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার খুব ভোরে পুনে পুলিশ দিল্লিতে সমাজকর্মী ও সাংবাদিক গৌতম নওলাখার বাড়িতে পৌঁছয়। একই সময়ে হানা দেওয়া হয় হায়দরাবাদে লেখক ও সমাজকর্মী ভারভারা রাওয়ের বাড়িতে, ফরিদাবাদে নাগরিক অধিকার আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজের বাড়িতে, মুম্বইয়ে সমাজকর্মী ভার্নন গনজালভেজ এবং অরুণ ফেরেইরার বাড়িতে, রাঁচিতে স্টান স্বামী এবং গোয়ায় আনন্দ টেলটুম্বদে-র বাড়িতেও। সকলের বাড়িতেই চলে তল্লাশি।
সংবাদসংস্থা এএনআই-এর তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁরা হলেন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক গৌতম নওলাখা, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ভারভারা রাও, আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, এবং সমাজকর্মী ভার্নন গঞ্জালভেজ ও অরুণ ফেরেইরা। এঁদের সকলকেই ইউএপিএ -তে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোয়ার লেখক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী আনন্দ টোলটুম্বদে, যিনি গোয়া ইন্সটিট্যুট অফ ম্যানেজমেন্টের শিক্ষকও বটে, তিনি পুলিশ পৌঁছোনোর সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। ইনস্টিট্যুটের ডিরেক্টর তাঁকে পুলিশ হানার বিষয়ে জানান। আনন্দ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘‘গোয়ার বাড়ি তালাবন্ধ ছিল, কিন্তু পুনে পুলিশের দল তালা খুলে বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালায়।’’
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশসহ চার বুদ্ধিজীবীর হত্যা: গোলোকধাঁধার মধ্যে কী রয়েছে?
গত ৬ জুন এ ধরনেরই একটি অপারেশন চালিয়েছিল পুনে পুলিশ। সেবার দিল্লি, নাগপুর ও মুম্বাই থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোমা সেন এবং দিল্লির সমাজ কর্মী তথা রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি কমিটির সঙ্গে যুক্ত রোনা উইলসনও। এঁদেরকে ‘শহুরে মাওবাদী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার ভোররাতের হানা ওই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই।
জুনে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের আদালতে পেশ করার সময়ে পুলিশের বক্তব্য ছিল, এঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজীব গান্ধীর মতো করে হত্যা ষড়যন্ত্রে যুক্ত।
সিপিএমের তরফ থেকে এই গ্রেফতারির ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। দলের পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বামপন্থী বু্দ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মা ও নাগরিক অধিকার কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি হানার তীব্র বিরোধিতা করছে পলিটব্যুরো। পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে একই সঙ্গে বলা হয়েছে, অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছেন প্রশান্ত ভূষণের মতো আইনজীবীও।
ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহও এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
আরও পড়ুন, ধৃত গৌতম নওলাখাকে দিল্লির বাইরে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট
পুলিশের দাবি, নিষিদ্ধ মাওবাদী গোষ্ঠী এলগার পরিষদের কর্মসূচির আর্থিক দায়িত্ব বহন করেছে। তাদের আরও অভিযোগ, মাওবাদীরাই এই অনুষ্ঠান সংগঠিত করেছিল।