বম্বে হাইকোর্ট শুক্রবার এলগার পরিষদ মামলায় সমাজকর্মী গৌতম নওলাখা ও আনন্দ টেলটুম্বড়ের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এই খারিজ করার নির্দেশের সময়েই আদালত গ্রেফতারির উপর সুরক্ষা আরও চার সপ্তাহের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে এই সময়ের মধ্যে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন।
বিচারপতি প্রকাশ ডি নায়েকের এক সদস্যের বেঞ্চ আগাম জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন। এই দুই সমাজকর্মীও মাওবাদী যোগাযোগের জন্য অভিযুক্ত।
২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালত রায় সংরক্ষিত রেখেছিল। প্রায় দু মাস পর এই রায় দেওয়া হল।
পুনে পুলিশের আবেদন ছিল, অভিযুক্তদের সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সে আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর, পুনের এক বিশেষ আদালত আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেবার একদিন পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নওলাখা। পুনে আদালত তার নির্দেশে বলেছিল, নথি থেকে মনে হচ্ছে নিষিদ্ধ এই সংগঠন নিজেদের লক্ষ্যপূরণের জন্য বিভিন্ন পন্থা নিচ্ছে। বিভিন্ন সদস্যদের উপর বিভিন্ন ভার দেওয়া হয়েছে, যা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।
পুনে আদালত পুলিশের দেওয়ার নথির কথা উল্লেখ করেছে, যা মধ্যে নওলাখার লেখা বই ও নথি রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় বিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল এবং শহর এলাকার কাজ নামের নথিগুলি সহ অভিযুক্ত পি ভারভারা রাওয়ের পেন ড্রাইভ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট নওলাখার পক্ষ থেকে এলগার পরিষদ মামলায় পুনে পুলিশের করা এফআইআর নাকচ আবেদন অগ্রাহ্য করে।
নওলাখা এবং টেলটুম্বড়েকে ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুনেতে এলগার পরিষদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।
পুনে পুলিশ হাইকোর্টে নওলাখার আবেদনের বিরোধিতা করে দাবি করে তিনি শুধু নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী) গোষ্ঠীর সদস্যই নন. একজন সক্রিয় নেতাও বটে, যাঁর সঙ্গে কাশ্মীরের জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে।
বিশেষ সরকারি আইনজীবী অরুণা পাই আদালতে নিজের সওয়ালে বলেন, নওলাখা অর্থ সংগ্রহ, কর্মী নিয়োগ ও নিষিদ্ধ মাওবাদী গোষ্ঠীর অস্ত্র সংগ্রহে যুক্ত, এবং এসবের উদ্দেশ্য হল সরকারকে উৎখাত করা। পুনে পুলিশ নওলাখাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এবং দাবির সপক্ষে তারা বন্ধ খামে নথিও পেশ করে।
আইনজীবী যুগ চৌধুরী তাঁর সওয়ালে বলেছিলেন নওলাখা একজন নাগরিক অধিকার কর্মী এবং সে কারণে তাঁকে আদিবাসী এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে পরিদর্শনে যেতে হয়। আরও বলা হয়েছিল যে এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হল স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে যে অশান্তি ও হিংসার অভিযোগ ওঠে তার নথিভুক্তি করা, এবং পুনে পুলিশ এসব মিথ্যে সাজাচ্ছে।
পুনে পুলিশ অনিল টেলটুম্বড়ের আগাম জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে বলে, তিনি সিপিআই (মাওবাদী) দলের সক্রিয় সদস্য এবং অনুরাধা গান্ধী মেমোরিয়াল, সিপিডিআর (কমিটি ফর প্রটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস), এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ পিপলস লইয়ার্স (আইএপিএল)-এর মত শাখা সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত। সওয়ালে বলা হয়েছে এই সংগঠনগুলি জনসমক্ষে সরকারবিরোধী পরিবেশ তৈরি করছে।
বরিষ্ঠ আইনজীবী মিহির দেসাই সরকারের সওয়ালের বিরোধিতা করে বলেন, টেলটুম্বড়ের বিরুদ্ধে যে সব নথি পাওয়া গিয়েছে তা প্রামাণ্য নয়। কিনি আরও বলেন, এই সংগঠনগুলি যদি রাষ্ট্র বিরোধী হয়, তবে রাষ্ট্রের উচিত এগুলিকে নিষিদ্ধ করা। দেসাই বলেন, যেহেতু এ সংগঠনগুলি এখনও কাজ করছে, ফলে রাষ্ট্রের দাবি অগ্রাহ্য করাই উচিত।