ভারতের সংস্কৃতিজগতে ফের নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। প্রখ্যাত শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ১৯৫১ সালে লখনউতে জন্মেছিলেন শিল্পী। দেশ তথা বিদেশের মাটিতেও তাঁর শিল্পকর্মের খ্যাতি ছিল। সোমবার সকালে কলকাতার বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন পরিজনরা। ওয়াসিম কাপুরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে শিল্পীমহলে।
শৈশবে আর পাঁচটা শিশুর মতো জীবন ছিল না ওয়াসিমের। বয়স যখন ৬ মাস, তখন খাট থেকে পড়ে গিয়ে বড় চোট পেয়েছিলেন। এর পর শৈশবের বারোটা বছর কাটে বিছানায়, প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায়। হাসপাতাল আর বাড়ি করতে হত তাঁকে। বিছানায় শুয়ে দিন কাটত তাঁর। বাড়ির জানলা দিয়ে মানুষ, যানবাহন দেখতেন।
ছোট থেকেই সেইসব দৃশ্য খাতায় ধরে রাখতে ইচ্ছা করত ওয়াসিমের। বাবার কাছে সেই প্রথম আবদার ছবি আঁকার। বাবা তাঁকে ছবি আঁকার জিনিস এনে দিয়েছিলেন। শুয়েই শুয়েই ছবি আঁকা শুরু। ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা একজন আঁকার শিক্ষককে নিয়ে আসেন। তার পর শুরু হয় ওয়াসিমের আঁকা শেখা। তার পর ধীরে ধীরে দেবী প্রসাদ চৌধুরী, অতুল বসু, যামিনী রায়, মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেনদের মতো প্রথিতযশা শিল্পীদের সান্নিধ্যে আসেন ওয়াসিম।
কিন্তু কোনওদিন ভোলেননি শৈশবের শিক্ষক অমর নন্দনকে। তিনিই ওয়াসিমকে ১৫ বছর বয়সে আর্ট কলেজে ভর্তি করে দেন। ক্রাচে ভর দিয়ে যেতেন কলেজে। আর্ট কলেজে যাওয়ার সময়ই প্রথম বাইরের জগতের সঙ্গে আলাপ। কলেজের প্রথম বর্ষেই তাঁর ছবি প্রদর্শনীতে ঠাঁই পায়।
রং-তুলিতে ভর করে ডানা মেলে তাঁর স্বপ্নের দুনিয়া। দেশ-বিদেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। সর্বত্রই প্রশংসা আদায় করে নেয় তাঁর ছবি। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও নাম করেন তিনি। ভারতের সংসদ ভবন, উর্দু অ্যাকাডেমি, ললিতকলা অ্যাকাডেমি, সর্বত্র তাঁর আঁকা ছবি স্থান করে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তাঁর আঁকা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর তৈলচিত্র এখনও রয়েছে।
শৈশবে বিছানাবন্দি হওয়ার যন্ত্রণা কোনওদিন পিছু ছাড়েনি তাঁর। একলা একলা শৈশব কেটেছে তাঁর। একাকীত্ব, যন্ত্রণা, অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল জীবন। তাঁর আঁকা ছবিতে কোথাও যেন সেগুলি ফুটে উঠত বার বার। বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমি তো ডিপ্রেশনকে সঙ্গে নিয়ে চলি।'