উত্তরপ্রদেশের মথুরা জংশনে মঙ্গলবার রাতে একটি লোকাল ট্রেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা উঠে যায় প্লাটফর্মে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও। যাতে দেখা যাচ্ছে ভিডিও কলে ব্যস্ত ছিলেন ট্রেন চালক। ইতিমধ্যে রেলের তরফে ২৮ পাতার একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে লোকো পাইলট সহ ৫ রেল কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা রেলওয়ের কর্মচারীদের মধ্যে লোকো পাইলট গোবিন্দ হরি শর্মা এবং অন্যান্য কর্মচারীরা রয়েছেন।
যে সময় ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে উঠে যায় সেই সময় সেখানে বিশেষ যাত্রী না থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে প্লাটফর্মের উপর ট্রেন উঠে যাওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে এসেছে। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই ট্রেন থামিয়ে অন্য এক জনকে কাজ বুঝিয়ে নেমে যান চালক। তিনি নামার পরই হঠাৎ ট্রেনটি চলতে শুরু করে। তার পরই সেটি প্লাটফর্মের উপর উঠে পড়ে। উত্তরপ্রদেশের মথুরা স্টেশনে তখন আতঙ্কে ছোটাছুটি পড়ে যায়।
দ্বিতীয় চালক ট্রেনে উঠেই থ্রটলের উপর নিজের ব্যাগ নামিয়ে রাখেন। এরপর চালকের আসনে বসে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ট্রেনটি চলতে শুরু করার পরও ফোনে ব্যস্ত ছিলেন চালক। তার পর ট্রেনটি লাইন ছেড়ে সোজা প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়ে। থ্রটলের উপর ব্যাগ রাখায় ব্যাগের চাপেই থ্রটলটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তার জেরেই এগিয়ে যায় এবং ইঞ্জিনের অনেকটা অংশ মথুরা প্ল্যাটফর্মে উঠে যায়। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার তেজপ্রকাশ আগরওয়াল জানান, 'ইতিমধ্যেই শচীন-সহ মোট পাঁচজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে'। মথুরা স্টেশন ডিরেক্টর সঞ্জীব শ্রীবাস্তব জানান, 'যে পাঁচজনকে সাসপেন্ড করা হয়, তাঁরা প্রত্যেকেই মদ্যপ ছিলেন এবং ডিউটির সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন'। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় রেলকর্মীদের গাফিলতি প্রকাশ্যে আসে। এরপরই রেলের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দেয় বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।
দুর্ঘটনা সংক্রান্ত চারটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে। তদন্ত রিপোর্টের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ক্যামেরার ভিডিও ক্লিপ অনুযায়ী, ট্রেন আসার পর কর্মরত লোকো পাইলট শচীন ক্রমাগত তার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মোবাইল দেখতে দেখতে অর্থাৎ ভিডিও কল করতে করতে থ্রটলের উপর নিজের ব্যাগ নামিয়ে রাখেন। পরই হঠাৎ ট্রেনটি চলতে শুরু করে। তার পরই সেটি প্লাটফর্মের উপর উঠে পড়ে। ২৮ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লোকো পাইলটসহ ৫ জন রেল কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা রেলের কর্মচারীরা হলেন লোকো পাইলট গোবিন্দ হরি শর্মা, হেলপার ইলেকট্রিশিয়ান শচীন, টেকনিশিয়ান কুলজিৎ, ব্রিজেশ এবং হারওয়ান কুমার।
বৃহস্পতিবার মথুরায় ইএমইউ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে লোকো পাইলট ইঞ্জিনে উঠেছিলেন তিনি সেই সময় মদ্যপ ছিলেন এবং তার মোবাইল ফোনটি দেখছিলেন। মঙ্গলবার রাতে, ট্রেনটি মথুরা স্টেশনে ১০.৪৯ মিনিটে পৌঁছেছিল, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শচীন কেবিনে ঢোকার এক মিনিটের মধ্যেই ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়ে। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার তেজপ্রকাশ আগরওয়াল ঘটনার সঙ্গে জড়িত শচীন সহ পাঁচজনকে সাসপেন্ড করেছেন। অন্য চারজনের মধ্যে, হরভজন সিং, ব্রজেশ কুমার কুলজিত এবং গোভিদ হরি শর্মা । আগ্রা রেলওয়ে ডিভিশন ম্যানেজার টিপি আগরওয়াল বলেছেন যে সাধারণত, ট্রেন আসার পরে, ইঞ্জিন কেবিনের চাবি ইতিমধ্যে সেখানে উপস্থিত সহকারী কর্মীদের কাছে দেওয়া হয়, এই কারণেই শচীনের কাছে চাবিটি ছিল।