জটিলতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ুয়াদের লাগাতার আন্দোলনের জের। ছাত্র আন্দোলন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকে কেন্দ্র করে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরেই পদত্যাগ করলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অমিতাভ দত্ত। যিনি কিনা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের দুই শতাংশ সেরা বিজ্ঞানীর অন্যতম। এর আগে যদিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং দুই সহ-উপাচার্য তাঁদের ইস্তফাপত্র দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন, তবে এই মুহূর্তে তাঁরা আপাতত সেই সিদ্ধান্তে নিরস্ত থাকলেও ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন পদত্যাগ করেছেন।
উপচার্যকে দেওয়া ইস্তফাপত্রে ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যজনিত কারণ দর্শিয়েছেন অমিতাভ দত্ত। তবে সূত্রের খবর বলছে, এক ছাত্রনেতার দুর্ব্যবহারে অত্যন্ত অপমানিত হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, চলতি মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরের ৭ তারিখেই অমিতাভবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এপ্রসঙ্গে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মন্তব্য, "ওঁর পদত্যাগপত্র পেয়েছি। আমি ওঁকে অনুরোধ করব, উনি যেন পদত্যাগ না-করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। তা বলে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যায় না।"
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের (ফেটসু) চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদার সোমবার অধিক রাতে অমিতাভবাবুকে ফোন করে ভর্তি ও পরীক্ষার ফলপ্রকাশের প্রক্রিয়া জুমস সংস্কারের জন্য গড়া দ্বিতীয় কমিটির 'রেজোলিউশন' চেয়েছিলেন। পাশাপাশি উপাচার্যকেও ফোন করে এই একই দাবি জানান তিনি। উপাচার্য তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন যে, তিনি বিষয়টি দেখেন না। আর ডিন অমিতাভ দত্ত জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষরের পরে রেজিস্ট্রারেই বিষয়টি প্রকাশ করবেন। ফেটসুর চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি উপাচার্য ও ডিনের সঙ্গে অত্যন্ত অমার্জিত ব্যবহার করেন।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কি অমিতাভবাবু পদত্যাগ করলেন? প্রশ্ন ছুঁড়তেই অরিত্র মজুমদারের উত্তর, "অমিতাভবাবু এই কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। এতদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেসব বিষয় নিয়ে জট পাকিয়ে রেখেছেন, তাতে স্যর (অমিতাভবাবু) কেন, যিনিই আসুন না কেন, চাপে পড়বেন। উনি হয়তো সেই চাপেই পড়েছেন। এবং তার থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন বলে ইস্তফা দিয়েছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যাগুলো মেটাতে চাই। যা করা হয়েছে, পড়ুয়াদের স্বার্থেই করা হয়েছে।"
প্রসঙ্গত, যাদবপুরের আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ব্যবহার নিয়ে বারবারেই প্রশ্ন উঠছে। উপাচার্যকে যখন-তখন ফোন করে বা অনলাইনে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় প্রশ্ন করা হচ্ছে, "এত টাকা মাইনে পেয়েও বাড়িতে বসে থাকছেন কেন", "কেন কথার খেলাপ করছেন...।" ছাত্রদের একাংশের এমন আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।