প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনগণকে 'বড়দিন এবং নববর্ষের' উৎসবের মরসুমে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি তার ৯৬ তম 'মন কি বাত' ভাষণ দেওয়ার সময় চিন সহ বিশ্বের একাধিক দেশে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। মোদী তার ভাষণে বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশেই করোনার প্রকোপ বাড়ছে, তাই আমাদের মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়ার বিষয়ে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা যদি সতর্ক থাকি, তবে আমরা নিরাপদ থাকব আমাদের পরিবারও নিরাপদ থাকবে এবং আমাদের উৎসব উপভোগে কোনও বাধা থাকবে না, "।
চিনে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সপ্তাহের শুরুতে দেশে কোভিড -১৯ পরিস্থিতি এবং প্রস্তুতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন। সপ্তাহ জুড়ে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কোভিড ১৯ পরীক্ষা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের র্যানডাম পরীক্ষা এবং জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই তাদের প্রস্তুতিপর্ব সেরে রেখেছে। পাশাপাশি দেশে ইতিমধ্যে ২২০ কোটির বেশি টিকাদানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টিকাদানের ভারতের এই গতির জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানান মোদী।
প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনার তাণ্ডব। এই মুহূর্তে চিনের পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। অমিল ওষুধ। এদিকে, চিকিৎসকরা দাবি করেছেন যে চিনে ইতিমধ্যে ১০ কোটি মানুষ সংক্রামিত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়ে পারে ১০ লাখ মানুষের। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের পালমোনারি মেডিসিনের এইচওডি ডাঃ নীরজ কুমার গুপ্ত বলেছেন, “চীনে ১০ কোটির বেশি মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ৫ লাখ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয় তাহলেও মৃত্যু হতে পারে ১০ লাখ মানুষ। তিনি বলেন, “চিন এখন সেই পর্যায়ে রয়েছে যেখানে ভারত আগে ছিল, কিন্তু ভারত এখন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক অভিজ্ঞ।”
ডক্টর গুপ্তা বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত তিনটি তরঙ্গের মুখোমুখি হয়েছি। প্রথম তরঙ্গটি ছিল মৃদু। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের দ্বিতীয় তরঙ্গটি খুবই মারাত্মক ছিল। ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের তৃতীয় তরঙ্গটি গুরুতর নয় কিন্তু সংক্রামক ছিল। চিনে দীর্ঘ কঠোর লকডাউনের কারণে নাগরিকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে”।
২০ দিনে আক্রান্ত ২৫ কোটি!
একই সময়ে, চিনে ফাঁস হয়েছে একটি সরকারি নথি। নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত ২০ দিনে ২৫ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রেডিও ফ্রি এশিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত নথির উল্লেখ করে বলেছে, “মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘জিরো-কোভিড নীতি’ শিথিল করার পরে, পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এবং মাত্র ২০ দিনের মধ্যে, চিন জুড়ে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কোভিড-এ সংক্রমিত হয়েছেন।” মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের বৈঠকে সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসারে, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে, ২৫ কোটি মানুষ কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, যা দেশের জনসংখ্যার ১৭.৬৫ শতাংশ। সোমবার থেকে প্রতিদিন ৩৫ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন সংক্রামিত হতে পারেন বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিচুয়ান প্রদেশ ও বেজিংয়ের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ করোনা পজিটিভ।
ইতিমধ্যেই সতর্ক ভারত সরকার
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঘোষণা করেছেন যে চিন সহ পাঁচটি দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। “চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং এবং থাইল্যান্ড থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে বিমানবন্দরেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হবে। যদি এই দেশগুলির কোন যাত্রীর করোনা উপসর্গ বা রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায় তবে তাকে পাঠানো হবে। কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।”