Advertisment

‘প্রমাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য নয়’, নারোদা গাম হত্যা মামলায় সিটকে দুষল বিশেষ আদালত

নারোদা গাম হত্যাকাণ্ডে বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি সমেত ৬৯ জন বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Naroda Gam massacre, Naroda Gam, 2002 Naroda Gam, indian express, gujarat news

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষ তদন্ত দল (SIT)২০০২ সালের নরোদা গাম গণহত্যার সঠিক তদন্ত করেনি এবং আদালতে উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। যার ওপর ভিত্তি করে এটা প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, মঙ্গলবার নরোদা গাম গণহত্যা মামলার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। নারোদা গাম হত্যাকাণ্ডে বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি সমেত ৬৯ জন বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। ২০০২ সালে এই দাঙ্গায় ১১ জনের মৃত্যু হয়।দাঙ্গার ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি এবং বজরং দলের নেতা বাবু বজরঙ্গি সহ ৮৬ জনকে তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করা হয়।

Advertisment

গুজরাটের নারোদা গাম মামলায় রায় দিয়েছে আহমেদাবাদের বিশেষ আদালত।নরোদা গাম দাঙ্গা মামলায় ৬৭ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী মায়া কোদনানি ও বজরং দলের নেতা বাবু বজরঙ্গীও। এই মামলায় মোট ৮৬ জনকে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে ১৮ জন বিচার চলাকালীন মারা যান। এই মামলায় মোট ১৮২ জন সাক্ষী ছিলেন। তাঁদের জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর আসে কোর্টের রায়। ঘটনাটি ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, সেই দিন অযোধ্যা থেকে গুজরাট পৌঁছেছিল সবরমতি এক্সপ্রেস। এর কিছু সময় পর ট্রেনটি ভাদোদরার কাছে গোধরায় তার S-6 বগিতে ৫৭ জন করসেবককে ট্রেনের মধ্যে একটি কোচে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

১৭২৮ পাতার আদালতের এই আদেশ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয় এবং নারোদা গাম গণহত্যায় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাসের জন্য SIT-কে দায়ী করা হয়। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে যে তদন্তকারী সংস্থা সাক্ষীদের বিবৃতি যথাযথ ভাবে যাচাই করেনি এবং আদালত যোগ করেছে যে তাদের জবানবন্দিগুলি পুলিশের সামনে পূর্বে্র জবানবন্দির থেকে একেবারেই বিপরীত। আদালত আরও বলেছে তদন্তকারী সংস্থা টিআই প্যারেডও যথাযথভাবে করেনি। সাত বিচারক বিভিন্ন পর্যায়ে এই মামলার শুনানি করেন। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর গৌরাঙ্গ ব্যাস বলেছেন, "আমরা সরকারকে আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করার পরামর্শ দেব।"

নরোদা গাম গণহত্যা মামলাটির তদন্ত সিট করছিল। ২০০২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি আহমেদাবাদ শহরের নরোদা গাম এলাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসার কারণে ১১ জন মুসলমান নিহত হন। গোধরায় ট্রেনে আগুন দেওয়ার সময় সবরমতি এক্সপ্রেসের ৫৮ জন যাত্রী মারা যাওয়ার একদিন পর এই ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালে, একটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিট ৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে, তাদের ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ (খুন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ), ১৪৭ (দাঙ্গা), ১৪৮ (দাঙ্গা) ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), এবং ১৫৩ (দাঙ্গার জন্য উস্কানি) নং ধারায় মামলা রুজু করা হয়।  এই মামলায় শুনানি চলার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৭ সালে কোদনানির পক্ষে প্রতিরক্ষার সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন। 

আহমেদাবাদের বিশেষ আদালত বৃহস্পতিবার এই মামলায় মায়া কোদনানি সহ ৬৯ জনকে মুক্তি দেয়। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বের আমলে ২০০২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে ওই হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটি শুরু হয়েছিল। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় বিভিন্ন মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সেজন্য একটি আদালতে এ মামলা তোলা হয়েছিল। আদালতে এ মামলার শুনানি চলে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত।

মামলার অন্যতম সাক্ষী ইমতিয়াজ আহমেদ হুসেন কুরেশি তিনি বলেছেন, “তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল আদালতের। পরিবর্তে, আদালত তাদের মুক্তি দিয়েছে। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের ‘বিশ্বাস’ নষ্ট হয়ে গিয়েছেচ। সেদিনের দাঙ্গায় যারা ভুক্তভোগী ছিলেন তাদের জন্য আজ একটি কালো দিন। যারা মারা গেছেন সেই দাঙ্গায়, তারা কি তখন আত্মহত্যা করে মারা গেছেন? তারা কি নিজেরাই নিজেদের পুড়িয়ে খুন করেছে?”  তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে ন্যায় বিচারের আশায় সেদিনের দাঙ্গায় স্বজনহারা পরিবারগুলি অপেক্ষা করে এসেছে। তবে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব”।

শরীফ মালেক মামলার আরও এক সাক্ষী মায়া কোদনানি এবং জয়দীপ প্যাটেল সহ আদালতে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে শনাক্ত ও সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, এই রায় ইঙ্গিত দেয় যে যারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হিংসতা অংশ নিচ্ছে তাদের রাষ্ট্র সব দিক থেকে এমনকী আইনের দিন থেকে সহয়তা প্রদান করছেন, আদালতের এই রায় সাধারণ মানুষের কাছে এক ভুল বার্তা দেবে”।

Riot
Advertisment