সাবাশ! বিদেশ থেকে ফেসবুকের ফোনে ভারতে আত্মহত্যা রুখল পুলিশ

রোমহর্ষক, সিনেমাকেও হার মানাবে বাস্তব এই কাহিনী।

রোমহর্ষক, সিনেমাকেও হার মানাবে বাস্তব এই কাহিনী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
রাহুল-প্রিয়াঙ্কার মুখোমুখি পাইলট।। করোনা আক্রান্ত প্রণব।। সুশান্তকাণ্ডে ফের সুপ্রিম কোর্টে রিয়া

ফেসবুকের এক আধিকারিকের ফোনে প্রাণ বাঁচল ২৫ বছরের তরুণের।

দিল্লির এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। আয়ারল্যান্ডের ফেসবুকের দফতরের এক আধিকারিক তা জানতে পেরেই ফোন করেন দিল্লি পুলিশকে। এরপর দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলের সক্রিয়তা ও মুম্বই পুলিশের এক ইন্সপেক্টর এবং তাঁর স্ত্রীয়ের রাতভোরের চেষ্টা, প্রাণ বাঁচল বছর পঁচিশের এক ব্যক্তির। রোমহর্ষক, সিনেমাকেও হার মানাবে বাস্তব এই কাহিনী।

Advertisment

শনিবার সন্ধ্যার ঘটনা। আত্মহত্যা করার আগে এক ব্যক্তি একাধিক ফেসবুক লাইভ করেন।প্রযুক্তির মাধ্যমে তা জানতে পারেন আয়ারল্যান্ডে ফেসবুকের এক আধিকারিক। দেরি না করে ওই আধিকারিক ভারতীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭.৫১ নাগাদ ফোন করে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানান দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলের ডিসিপি অন্বেশ রায়কে। ডিসিপির কথায়, 'ফেসবুকের দফতর থেকে ফোন আসে, জানায় যে দিল্লির বাসিন্দা কোনও এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে চলেছেন এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যে অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুক লাইভ করা হয় তার আইপি, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও লাইভ ভিডিও গুলো দেওয়া হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। এই সব ক্ষেত্রে সময় খুবই মূল্যবান। তাই পরক্ষণেই আমরা ওই নম্বর ট্র্যাক করা শুরু করি।'

খোঁজখবরের পর জানা যায় যে ওই নম্বর পূর্ব দিল্লির মান্দওয়ালির। পূর্ব দিল্লির ডিসিপি জসমিত সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাইবার সেলের ডিসিপি অন্বেশ রায়। জসমিত সিং বলেন, 'মধুবিহারের স্টেশন অফিসার এরপরই ওই অঞ্চলে পৌঁছে যায়। দেখেন সেটি এক মহিলার নম্বর। তবে ওই ভিডিও সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারনে নেই। মহিলা জানিয়েছিলেন, নম্বরটি তাঁরই নামে নথিভুক্ত রয়েছে, কিন্তু সেটি ব্যবহার করেন তাঁর স্বামী। তবে, দু'জনের মধ্যে ঝগড়ার পর ওই ব্যক্তি মুম্বইতে চলে গিয়েছেন। তারপর সে কোথায় রয়েছে সে সম্পর্কে মহিলা কিছুই জানেন না।'

সময় ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। যেকোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। তাই দিল্লি পুলিশের ডিসিপি অন্বেশ রায় যোগাযোগ করেন মুম্বই পুলিশের সাইবার সেলের ডিএসপি ডঃ রশমি কোরান্ডিকার সঙ্গে। তাঁর কথায়, 'দিল্লিতে বসবাসকারী মগিলা তাঁর স্বামীর মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে যতবারই ফোন করা হয় দেখা যায় সেটি হয় বন্ধ, নয়তো ধরছেন না। তারই মধ্যে আমি ও আমার দলের সদস্যরা মোবাইল ব্যবহারকারীর এলাকা খুঁজে বার করার চেষ্টা করতে থাকি। মুম্বই সাইবার সেলের ইন্সপেক্টর প্রমোদ খোপিকার ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে যান।'

Advertisment

ইন্সপেক্টর খোপিকার জানান, তিনি বাড়িতেই ছিলেন। স্ত্রী ও বাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে বসে রাতের খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময়ই ডিসিপি তাঁকে ফোন করেন। সব শুনে খোপিকার বেশ কয়েকবার ব্যক্তির ব্যবহার করা মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু, ওই ব্যক্তি ফোন ধরেননি। তারপর ব্যক্তির স্ত্রীকে পুলিশের তরফে জানানো হয়, স্বামীর উদ্দেশ্যে হোয়াটঅ্যাপে সংবেদনশীল ভয়েস নোট ছেড়ে রাখতে। একই সঙ্গে তাঁদের সন্তানের ছবি পাঠাতে। স্বামী হোয়াটসঅ্যাপ দেখলেই তা পুলিশকে জানানোর জন্যও বলা হয়।

'প্রায় রাত সাড়ে ১১টার সময় স্ত্রী জানান তিনি হোয়াটস্যাপ দেখেছেন। তখনই তাঁকে ফোন করতে বলি। সঙ্গে আমাকেও কনফারেন্স কলে ধরতে পরামর্শ দি। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় আমিই ওই ব্যক্তিকে ফোন করি এবং মহিলাকে কনফারেন্সে ধরিয়ে দি। ফোনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাদানুবাদের মধ্যেই ততক্ষণে আমাদের দল ব্যক্তি কোন অঞ্চলে রয়েছেন তা জানতে পেরে গিয়েছে। জানা যায় যে ওই ব্যক্তি ভায়ান্ডারে আছেন, স্থানীয় পুলিশকে দ্রুত সেখানে পৌঁছতে বলা হয়।' এমনটাই জানান ইন্সপেক্টর খোপিকার।

লকডাউনের কারণে ব্যক্তির আয় কমেছে। যা ঘিরেই অশান্তি। স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া। এছাড়া সংক্রমণের জেরে অত্যন্ত উদ্বিগ্নতার জন্যই তাঁর আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানান ওই ব্যক্তি। ফোনে কথা বলে ব্যক্তিকে ব্যস্ত রাখতে বলা হয়েছিল তাঁর স্ত্রীকে। পুলিশের তরফেও ব্যক্তিকে জানানো হয় যে, তাঁর স্ত্রী, পুলিশ তাঁকে ভালোবাসেন। তাঁর পিছনে সবাই রয়েছে।

যদিও নিজের ধারনা থেকে বেরোতে চাইছিলেন না ব্যক্তি। এরপর উপায় না দেখে ইন্সপেক্টর খোপিকার তাঁর স্ত্রীকে ওই ব্যক্তির কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব নিতে বলেন। খোপিকার বলেন, 'আমার স্ত্রী ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে বলেন আমরা দু'জনে লড়াই ঝগড়া করেও কীভাবে একসঙ্গে জীবন কাটাই। আমি করোনা সংক্রমিত হয়েছি বলেও আমার স্ত্রী মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য হন। আর্থিক দৈনতা ঘোচাতে জানায় যে, আমাদের নামে একটি ওলা গাড়ি নথিভুক্ত রয়েছে প্রয়োজনে সেটি চালাতে পারে ওই ব্যক্তি।' সাহস ও আস্থা যোগাতে সবসময় বলা হয় পুলিশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।

এইভাবেই বেশ কয়েকঘন্টা কেটে যায়। রাত প্রায় ৩টে নাগাদ মুম্বই পুলিশ ওই ব্যক্তির বাড়িতে পৌঁছায়। দেখা যায় ব্যক্তি বছর ২৫য়ের এক তরুণ। খোপিকান্দের কথায়, 'যখন দেখি সব ঠিকঠাক রয়েছে তখন আমি ফোন ছাড়ি। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ আমি আবার তাঁকে ফোন করি। যদিও আমি এখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।' ওই তরুণ পুলিশকে একাধিকবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Facebook delhi mumbai