Advertisment

দেশদ্রোহিতা থেকে তাজমহল: আইআইটি কানপুরের সেই শিক্ষকের কিছু মণিমুক্তো

ফৈয়াজের কবিতা নিয়ে কানপুর আইআইটি-র যে শিক্ষক ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর মোট ১০টি বই আছে। সব বইয়ের প্রকাশকই একটি গোষ্ঠী, যারা বেদের গরিমা পুনরুদ্ধার করতে চায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kanpur IIT Professor

ভাশী শর্মা আইআইটি বম্বে থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন

জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমারের উপর পাতিয়ালা হাউস কোর্টে যে হামলা হয়েছে, তা দেশদ্রোহীদের নিবৃত্ত করবে। হিন্দুরা যদি ধর্ষণ জানত, তাহলে ভারতে কোনও মুসলিম মহিলা বাঁচত না। ভারতীয় মুসলিমদের পূর্বপুরুষ ছিলেন হিন্দু ও বৌদ্ধরা। বিশ্বের উচ্চতম শিবাজি মূর্তি বসানো যথার্থ কাজ কারণ সরকার তো তাজমহলের মত ইসলামি স্থাপত্যের পিছনে অর্থ খরচ করে।

Advertisment

এসব বক্তব্য আইআইটি কানপুরের অস্থায়ী শিক্ষক ভাশী মন্ত শর্মার। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নিজের প্রকাশিত দুটি বইয়ে এসব কথা লিখেছেন তিনি। কয়েকদিন আগে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভের সমর্থনে কানপুর আইআইটির ছাত্রছাত্রীদের ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজের কবিতা পাঠ নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি সংবাদ শিরোনামে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ভাশীর অভিযোগের তদন্ত করার জন্য ৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। অভিযোগ, ফৈয়াজের হাম দেখেঙ্গে কবিতায় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে।

৩২ বছরের ভাশী আইআইটি কানপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যুক্ত রয়েছেন। প্রতি বছরই ইন্সপায়ার ফ্যাকাল্টি প্রকল্পে ২৭ থেকে ৩২ বছর বয়সী পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চারদের চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। তাঁরা পাঁচ বছর নিয়োজিত থাকেন।

ভাশী শর্মা আইআইটি বম্বে থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি এ যাবৎ ১০টি বই লিখেছেন। সব বইয়েরই প্রকাশক অগ্নিবীর নামক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য হল "বেদের গরিমা পুনরুদ্ধার" এবং "অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম"।

তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই শিক্ষক জানান, তিনি চান না তাঁকে উদ্ধৃত করা হোক। তিনি বলেন, "সংবাদমাধ্যম তাঁকে নিয়ে লেখায় তিনি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছেন। তিনি দাবি করেন, তিনি প্রকাশ্যে যা লিখেছেন, তার সবেতেই ডিসক্লেমার রয়েছে, এবং সে ডিসক্লেমারের উপর গুরুত্ব আরোপ না করা হলে তাতে ভুল অর্থ যাবে।"

তাঁর দুটি বই- A Liberal’s (F)Laws – Hypocrites that feed terrorism’ এবং ‘Indian Muslims – Children of India or Slaves of Arabs’। এ বই দুটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কানহাইয়া কুমারের উপর হামলা:

প্রথম বই ‘A Liberal’s (F)Laws…’-এ শর্মা কাঠুয়া ধর্ষণ থেকে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা, এরকম বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ‘Liberal’s Love for Afzal Guru’ পরিচ্ছেদে তিনি ২০১৬ সালে পাতিয়ালা হাউসে কানহাইয়া কুমারের উপর আইনজীবীদের হামলাকে সমর্থন করেছেন।

“I also believe that such incidents act as deterrents against designs of terrorists. You cannot pass the তিনি লিখেছেন, "আমি এও বিশ্বাস করি যে এ ধরনের ঘটনা সন্ত্রাসবাদীদের ছকের বিরুদ্ধে নিবৃত্তিমূলক ভূমিকা নেবে। জনগণের নিরাপত্তার সমস্ত দায় শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। যে দেশে ২৬-১১-র মত ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আইসিস গোপ্রেমীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধের ডাক দিচ্ছে, যেখানে পাঠানকোটের বিমানঘাঁটির উপর হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানে সম্সত নাগরিককে অতিক্রিয়াশীল থাকতে হবে। পরেরবার ভারতবিরোধীরা কোনওরকম দেশবিরোধী কাজ করার আগে ভয়ে কাঁপবে। এ ঘটনা আইনি বা নৈতিক ভাবে কতটা ঠিক সেসব সেই বিশ্লেষকরা স্থির করবেন, যাঁরা শুধু বিশ্লেষণ করেন, কাজ করেন না। কিন্তু চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে সাধারণ কর্তব্যের আহ্বান পেরিয়ে চূড়ান্ত পদ্ধতিগ্রহণ জরুরি।"

শিবাজি মূর্তি বিষয়ে:

শিবাজি মূর্তিতে প্রচুর খরচ নিয়ে যেবিতর্ক চলছে, তার সমালোচনা করে শর্মা লিখেছেন, "পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অর্থ আসে করদাতাদের কাছ থেকে। আমি কোনওদিন শুনিনি য়ে তাজমহল বা রেড ফোর্টের মত বিশালকায় সৌধের জন্য টাকা নষ্ট করা হয়েছে বলে কেউ আওয়াজ তুলেছে- আপনাদের নিজেদের ইতিহাসই বলে এগুলো যখন তৈরি হয়েছে, তখন ভারতে যে রকম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ছিল, তেমনটা ইতিহাসে আর নেই। এর বদলে আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের, আপনাদের মার্কিন পার্টনারদের সে সব জায়গায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমরা যখন শিবাজির মূর্তি তৈরির কথা বলি , আপনাদের জ্বালা শুরু হয়... যদি ভারত সরকারের কাছে তাজমহল, হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ, লাল কেল্লা এবং অন্য ইসলামি সৌধ রক্ষণাবেক্ষণের মত অর্থ থাকে. তাহলে শিবাজি মহারাজের মূর্তি নিয়ে কান্নাকাটি বন্ধ করুন। আমরা জানি ওঁর তরবারি আপনাদের পেছনে ভয় ধরায়, কিন্তু এটাই সত্যি। এর সঙ্গেই বাঁচতে হবে।"

কাঠুয়া ধর্ষণ মামলা:

একটি পরিচ্ছেদে তিনি কাঠুয়া ধর্ষণ মামলায় জম্মু কাশ্মীর পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। "আর আপনারা কখনও শুনেছেন মন্দিরে হিন্দু ধর্ষণ ঘটেছে? এ আমাদের রক্তে নেই। আমরা যদি এরকম করতাম, আমরা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আক্রমণের সময়ে এই ভাষাতেই জবাব দিতাম। ওরা মন্দির ধ্বংস করে তার উপর মসজিদ বানিয়েছে। ওরা লক্ষ লক্ষ ধর্ষণ করেছে। হিন্দুরা যদি ধর্ষণ জানত, তাও ধর্মের নামে, তাহলে কোনও মুসলিম অনুপ্রবেশকারী বা মহিলা ভারতে বাঁচত না।"

ভারতীয় মুসলিমদের সম্পর্কে:

‘Indian Muslims – Children of India or Slaves of Arabs’ বইতে শর্মা দাবি করেছেন, নিজেদের ভারতীয় শিকড় চিনতে পারেন না উপমহাদেশের মুসলিমরা। তিনি লিখেছেন, "এই উপমহাদেশের অনেক মুসলিমই নিজেদের আরম শিকড়ের কথা ভাবলেও, তাদের পূর্বপুরুষরা যে হিন্দু ও বৌদ্ধ এ সত্য বদলাবে না।"

এ বইয়ের গোড়ায় শর্মা ডিসক্লেমার দিয়ে লিখেছেন, "কোনও একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্য সম্প্রদায়ের ঘৃণা ছড়ানো এ বইয়ের তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি লিখেছেন, ইসলাম বলতে তিনি সেইসব গোঁড়া ইসলামপন্থীদের কথা বুঝিয়েছেন যারা সমানাধিকার মানে না ও অমুসলিমদের স্বর্গবাসের বিষয়টি অস্বীকার করে ও স্বধর্মত্যাগীদের হত্যার কথা বলে।"

ফৈয়াজ বিষয়ে:

গত ১ জানুয়ারি নিজের ব্লগে শর্মা লিখেছেন, "বিপ্লবী ফৈয়াজ সাহেবের কাছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের চেয়ে জিন্নার ইসলামপন্থী পাকিস্তান বেশি কাঙ্ক্ষিত ছিল। যে পাকিস্তান হিন্দু-শিখ-অমুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। না, হিন্দু ভারতে মৃ্ত্যুর আশঙ্কায় ফৈয়াজ পাকিস্তানে যাননি, ফৈয়াজ মুসলিমদের মুক্তির জন্য পাকিস্তান তৈরির কথা ভেবেছিলেন।"

Advertisment