কেন্দ্রীয় তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল কৃষক সংগঠনগুলি। দাবি-দাওয়া, আলোচনায় মেলেনি সমাধান। শেষ পর্যন্ত দিল্লি সীমানায় ধরনায় বসেছিলেন আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনের হাজার হাজার সদস্য। মাঝে মধ্যেই ঘটেছে হিংসার ঘটনা। কিন্তু তাতেও দমে না গিয়ে কেন্দ্রীয় আইন বাতিলের দাবিতে অনড় থেকেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি অনুসারে, কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন চলার মাঝেই প্রাণ গিয়েছে শতাধিক মানুষের। বছরব্যাপী কৃষকদের আন্দোলনে বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন। যা ভারতীয় কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে বিরাট সাফল্য বলেই বিবেচিত হয়। এবার কৃষকদের এই বীরগাথা ঠাঁই পেল পাঠ্য পুস্তকে।
লুধিয়ানার ষষ্ঠ শ্রেণির পাঞ্জাবি পাঠ্য পুস্তকে কৃষক আন্দোলন কথা রয়েছে। 'মোহ দিয়ান ট্যান্ডন' নামক পাঠ্য পুস্তকে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি অধ্যায়ে কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি রয়েছে। অধ্যায়টির নাম 'কৃষক আন্দোলন'। যা লিখেছেন ডঃ জগজিৎ সিং ধুরি। লুধিয়ানার ব্রিটানিকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারপার্সন ডঃ ধুরি। পাশাপাশি তিনি ফেডারেশন অফ প্রাইভেট স্কুলস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি।
ডঃ জগজিৎ সিং ধুরির কথায়, 'ইতিহাস সৃষ্টিকারী কৃষক আন্দোলনের সম্পূর্ণ কথা পাঠ্য পুস্তকের ওই অদ্যায়ে লেখা রয়েছে। পড়ুয়ারা আন্দোলনকারী কৃষকদের সংকল্প, সত্যবাদিতা, অধিকারের জন্য সরব হওয়া, ঐক্যবদ্ধ থাকার শক্তি সম্পর্কে জানতে পারবে এবং আমাদের উদীয়মান প্রজন্ম পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের দৃঢ় মূল্যবোধ সম্পর্কে সমৃদ্ধ করবে।'
পাশাপাশি কৃষকদের আন্দোলনের সাফল্য, শিখদের দশম গুরু গোবিন্দ সিংয়ের দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত বলেও দাবি করেছেন লেখক ডঃ জগজিৎ সিং ধুরি। তিনি বলেছেন, 'জফরনামায় গুরু গোবিন্দ সিংজি বলেছিলেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়া ন্যায় সঙ্গত ও কেউ যদি সঠিক হন তবে আপনি জয়ী হতে বাধ্য। সেটাই পাঠ্য পুস্তকে কৃষক আন্দোলন অধ্যায়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে, একের পর এক স্কুল থেকে এই বইয়ের বরাত মিলছে। কৃষক আন্দোলনের অধ্যায়টিও সবার দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।'
রাজ্যের প্রায় শতাধিক স্কুল 'মোহ দিয়ান ট্যান্ডন' পাঠ্য বইটি কেনার জন্য বরাত দিয়ে ফেলেছে। এমনকী অর্ডার এসেছে ব্রিটেন ও আমেরিকা থেকেও।
ডঃ ধুরির কথায়, 'আমি লক্ষ্য করেছি যে পাঞ্জাবি পাঠ্য পুস্তকের বিষয়বস্তু গত দুই দশক ধরে সংশোধন করা হয়নি। কৃষকদের আন্দোলনের উপর একটি অধ্যায় লেখার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কৃষকদের লড়াই সমন্ধে জানানো। আমাদের কৃষকরা দিল্লি সীমানায় লড়াই করেছিল। এটি অন্য সাধারণ প্রতিবাদ ছিল না, যা দেখেই প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়। এই সংগ্রামে আমাদের শত শত কৃষক প্রাণ হারিয়েছে। পাঞ্জাবিদের নেতৃত্বে এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া এই ঐতিহাসিক আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বলার এর চেয়ে ভালো উপায় ছিল না।'
Read in English