ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। ইতিমধ্যেই অনেকেই রিকভারি এজেন্টের নামে থানায় অভিযোগও করেছেন। অনেকেই গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপের রমরমা এখনও বন্ধ হয়নি। বেঙ্গালুরুতে গত এক বছরে ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপের ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টদের হয়রানির কারণে দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া থেজাস নায়ার। দ্বিতীয়টি নন্দ কুমার টি,নামে এক ব্যক্তি যিনি এক সমবায় ব্যাঙ্কে কাজ করতেন।
থেজাস নায়ারের মৃত্যু তদন্তে নেমে পুলিশ উদ্ধার করে একটি সুইসাইড নোট। কী লেখা ছিল তাতে? “আমি যা করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত। এ ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আমার নামে থাকা একাধিক ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারছি না এবং এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। গুড বাই।" বারবার ফোন কল, হুমকি, ছবি মর্ফ করার হুমকিতেই কী এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু?
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে একাধিক ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপের মাধ্যমে থেজাস লোন নেয়। থেজাসের বাবা গোপীনাথ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “একাধিক অ্যাপ থেকে ঋণ নিয়েছিল ছেলে। অ্যাপের প্রতিনিধিরা তাকে ক্রমাগত হয়রানি করতে থাকে। আমি মাত্র পাঁচ মাস আগে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম, যখন আমি একটি অ্যাপ থেকে থেজাসের মর্ফ করা ছবি পেয়েছি। আমি তার ঋণের একটি অংশ ফেরত দিয়েছিলাম, কিন্তু তারপর তারা আমাকে আমার মর্ফ করা ছবি পাঠাতে শুরু করে”।
এর আগে ২৫ জুলাই, ২০২২-এ, নন্দ কুমার টি, নামের বছর 52-এর এক সমবায় ব্যঙ্ক কর্মী, চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন। সেক্ষেত্রেও তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ৪১টি ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। ক্রমাগত হয়রানির কারণেই তিনি আত্মঘাতী হন বলেও পুলিশ জানতে পারে। সেই সঙ্গে সুইসাইড নোটে এই অ্যাপগুলি বন্ধের অনুরোধও করেন তিনি পুলিশের কাছে।
চলতি বছর চিনা এই ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপগুলির উপর একটি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্তে দেখা গেছে যে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণের প্রায় ৩০-৪০শতাংশ প্রসেসিং ফি বাবদ কেটে নেওয়া হত এবং কার্যকর সুদের হার ছিল ২,০০০ শতাংশের মত। বেঙ্গালুরুর সিআইডি সাইবার ক্রাইম থানায় দায়ের করা ১৮টি মামলার ভিত্তিতে ইডি তদন্ত শুরু করে।
ইডি মার্চ মাসে চিনা ইন্সট্যান্ট লোন অ্যাপ র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত ১০৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার পর এক বিবৃতিতে বলেছিল, “লোন অ্যাপস এবং অন্যান্য উপায়ে জনসাধারণকে ইন্সট্যান্ট স্বল্পমেয়াদী ঋণ দেওয়ার নামে ৩০-৪০ শতাংশ প্রসেসিং ফি্র পাশাপাশি অতিরিক্ত সুদ ধার্য্য করে অ্যাপগুলি। পরবর্তীতে তা শোধ করতে না পারলে সংস্থাগুলি হুমকি দিয়ে এবং মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। ফোনে ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টদের অর্থের জন্য তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে,”।
অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টদের মাধ্যমে জুলুমের শিকার হচ্ছেন, যারা কখনও ঋণ গ্রহীতার ছবি মর্ফ করার হুমকি দেয়, অর্থাৎ যিনি ঋণ নিয়েছেন তার নগ্ন ছবি নিয়ে তা তাঁর পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের পাঠিয়ে দেবে অথবা পর্ন সাইটে আপলোড করে দেবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়। ঋণের টাকা সংগ্রহের নামে এই সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল ও হেনস্থা করেছে, শুধু তাই নয় ফোনে অভব্য ভাষায় হুমকি সেই সঙ্গে নগ্ন ছবি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে নির্যাতনও করছে বলেই দাবি পুলিশের।
বেঙ্গালুরু যুগ্ম পুলিশ কমিশনর এসডি শরনাপ্পা এ প্রসঙ্গে বলেন, “জনসাধারণ এই অ্যাপগুলির শিকার হয় কারণ এই অ্যাপে সেভাবে কোনও ডকুমেন্টেশন পদ্ধতি নেই এবং তারা অল্প পরিমাণ ঋণ প্রদান করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ঋণ পরিশোধ করার সময়, একই কোম্পানিগুলি অন্যান্য তাত্ক্ষণিক অ্যাপ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেয় গ্রাহককে, যার ফলে একাধিক অ্যাপের সেই ব্যক্তির ডেটা ভাগ হয়ে যায়”।
এই ধরনের অপারেশনের পিছনে চিনা মদত থাকার বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার শরনাপ্পা বলেছেন, “কিছু ক্ষেত্রে, আমরা তদন্ত করার পরে, আমরা জানতে পেরেছি মেকানিক্স এবং অটোরিকশা চালকরা এই অ্যাপগুলির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সংস্থাগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তারা পুরো কেলেঙ্কারি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিল। কেলেঙ্কারির পিছনের আসলে কারা তার কোনও চিহ্ন রেখে যায়নি অভিযুক্তরা’।