করোনা মোকাবিলায় দেশজুডে় লকডাউন। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই শাস্তির খাঁড়া। তার মধ্যেই মুম্বইবাসী কলকাতার তরুণের কাছে বৃহস্পতিবার ভোর হয়ে রইল অভিশপ্ত। ঘুম ভাঙল বাবার মৃত্যুর খবরে। কিন্তু, বিধিনিষেধ পেরিয়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার পৌঁছবেন কীভাবে? তাহলে কী বাবাকে শেষবারের জন্য দেখা যাবে না? চোখে জল নিয়েই মুম্বইবাসী অনিন্দ্য রায়ের মাথায় তখন হাজারো চিন্তা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত সোশাল মিডিয়ায় তাঁর দুঃখের কথা তুলে ধরেন ওই তরুণ। তাতেই উপায় বেরোয়। বাবার নিথর দেহ দেখার জন্য গাড়িতে মুম্বই থেকে ২,৩০০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলেছে। মহারাষ্ট্র পরিবহণ কমিশনার বিশেষ পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যেও মুম্বই থেকে কলকাতা যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বছর ২৮-য়ের অনিন্দ্যকে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছ'টায় ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে প্রায় ৩০টি মিসড কল ও প্রায় শ'খানেক মেসেজ দেখেন অনিন্দ্য। তারপরই বাড়িতে ফোন করেন তিনি। জানতে পারেন,পিতৃ বিয়োগ ঘটেছে তাঁর। অনিন্দ্যর বাবা রাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ৬১ বছর বয়সী আশীস কুমার রায় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। আকস্মিক এই খবরে দিক-বিদিক শূন্য হয়ে যায় তরুণের। বলছিলেন, 'মা এখন কী করছে, কীভাবে সব সামলাচ্ছে তা জানা নেই। তবে আমি বাবাকে শেষবারের জন্য যেবাবেই হোক চোখের দেখা দেখতে চাই।'
আরও পড়ুন: বিয়েবাড়িতেই মারণ ভাইরাসে সংক্রমিত কলকাতায় দত্তাবাদের বৃদ্ধ?
এরপরই বাবার মৃত্যু শংসাপত্র সোশাল মিডিয়ার পোস্ট করে বাড়ি ফিরতে চেয়ে আর্জি জানান অনিন্দ্য রায়। তাঁর কথায়, 'এরপরই এক বন্ধু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। বন্ধু আমাকে প্রথমে আমাকে প্রাক্তন কালেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তাঁর পরামর্শেই যোগাযোগ হয় মহারাষ্ট্র পরিবহণ কমিশনারের সঙ্গে।' এরপরই কমিশনারকে আশীসবাবুর মৃত্যু শংসাপত্র পাঠান তরুণ। মিনিট ৪৫-এর মধ্যেই মেলে কলকাতায় যাওয়ার ছাড়পত্র। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটের সময় বন্ধুকে সঙ্গে করে ব্যক্তিগত গাড়িতে মুম্বই থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
'সত্যি কথা আমি জানি না তিন রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে আমি আদৌ পৌঁছতে পারবো কিনা। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে আমি আমার মাকে একা ফেলে রাখতে পারি না। মা ভেঙে পড়েছে। এইভাবে বাবার চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।' কলকাতায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে বলছিলেন অনিন্দ্য রায়।
মহারাষ্ট্রের পরিবহণ কমিশনার শেখর চেন্নের কথায়, 'এই ধরনের আর্জি প্রথম এল। মানবিকতার খাতিয়ে ওই তরুণকে ছাড়পত্র দিয়েছি।'
Read full in English