সময়টা ১৮৮৭। রাজা বাঘাজি ঠাকুরের মোরবিতে তৈরি হয়েছিল ঝুলটো পুল। রবিবারের দুর্ঘটনার পর আজ যাকে মোরবি ব্রিজ নামে জেনে ফেলেছে গোটা ভারত। সেসময় এই ব্রিজে একসঙ্গে মাত্র ১৫ জনের ওঠার অনুমতি ছিল। ২০১০ সালে মোরবি পুরসভার বইয়েই এটা লেখে আছে।
Advertisment
ওই বই অনুযায়ী, গোড়ার দিকে লোকেরা যখন এটিতে হাঁটত, তখন এটি এতটাই দুলত যে ব্যবহারকারীকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। সেতুটিতে একসঙ্গে সীমিতসংখ্যক লোককে ওঠার অনুমতি দেওয়া হত। বেশি লোক যাতে সেতুতে উঠতে না-চায়, সেজন্য ১ টাকা পুরকর ধার্য হয়েছিল।
ব্রিজটি বানিয়েছিল সেই আমলে বম্বের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা রিচার্ডসন অ্যান্ড ক্রুডাস। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা তৈরি হয়েছিল ১৮৫৮ সালে। ১৮৭০ সালে মোরবির রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাঘাজি ঠাকুর। তিনি ১৯২২ পর্যন্ত এই এলাকা শাসন করেছেন।
Advertisment
তাঁর জমানাতেই ১৮৮৭ সালে তৈরি হয়েছিল ব্রিজটি। এই সেতু দরবারগড় প্রাসাদ ও নজরবাগকে যুক্ত করেছিল। সেতু তৈরির সামগ্রী এসেছিল ইংল্যান্ড থেকে। মোরবি পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেতুটি ৭৬৫ ফুট লম্বা প্রায় চার ফুট চওড়া। সেই সময় গুজরাট ছিল বম্বে প্রেসিডেন্সির অংশ।
মোরবি পুরসভার প্রকাশিত বই বলছে, 'ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল মাচ্ছু নদীর ওপর। আর, মাচ্ছু নদীর পাড়ে তৈরি হয়েছিল রেলের ওয়ার্কশপ। সেখানকার শ্রমিকদের মাসিক ১৫ টাকার একটি পাস দেওয়া হত। যাতে তারা এই সেতু ব্যবহার করে নদী পারাপার করতে পারে। সেই সময় একবারে সর্বোচ্চ ১৫ জনকে সেতুতে ওঠার অনুমতি দেওয়া হত। আর, মাঝেমধ্যেই মোরবি সেতু খারাপ হয়ে যেত। মেরামতির জন্য তখন সেতুতে চলাচল বন্ধ রাখা হত।'
আগে এই সেতুতে চলাচলের জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে অনুমতি নিতে হত। কলকাতার হাওড়া ব্রিজ ও ঋষিকেশের লছমনঝোলা ব্রিজকে সবাই ঝুলন্ত সেতু বলে। কিন্তু, সেগুলোও মোরবির মত পূর্ণমাত্রার ঝুলন্ত সেতু নয়। সেই হিসেবে মোরবির এই ব্রিজটা অনন্য। এমনটাই জানাচ্ছে স্থানীয় পুরসভার নথি।
১৯৭২ সালে রিচার্ডসন অ্যান্ড ক্রুডাস সংস্থার জাতীয়করণ করা হয়েছিল। জাতীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্ত এই সংস্থা। এর ১০০% শেয়ারের মালিক ভারত সরকার। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, ইস্পাত উৎপাদন, রেল, তেল ও গ্যাস, সার, চিনি, পরমাণু শক্তি, মহাকাশ, জল ও নিকাশি, শোধনাগারের ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার তৈরি, গ্যালভানাইজিং টেস্টিংয়ের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে এই সংস্থা।