উত্তর প্রদেশের মাহোবা জেলায় "ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার" অভিযোগে ২৩ জন মুসলিম তরুণের নামে এফআইআর দায়ের করল পুলিশ। এর আগে অভিযোগ ওঠে, একটি মুসলিম ধর্মীয় সমাবেশে ওই ২৩ জন হিন্দু অতিথিদের না জানিয়ে "আমিষ বিরিয়ানি" পরিবেশন করেছিলেন। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক ব্রিজভূষণ রাজপুতের হস্তক্ষেপের ফলেই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান যে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অ্যাফিডেভিট করতে রাজি ছিলেন অভিযোগকারী, কিন্তু ওই বিধায়ক তাঁকে অভিযোগ জানাতে রাজী করান।
বলা হচ্ছে, ৩১ অগাস্ট চরখারি থানা এলাকায় সালাত গ্রামে মুসলিম বাসিন্দাদের উদ্যোগে আয়োজিত উরস (এক বিশেষ ধর্মীয় সম্মেলন) চলাকালীন ঘটে এই ঘটনা। স্থানীয় এক ধর্মস্থানে গত ছ'বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এই উরস, জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এফআইআর-এ বলা হয়েছে যে হিন্দুদের না জানিয়েই তাঁদের ধর্মীয় আবেগে ইচ্ছাকৃত আঘাত করার উদ্দেশ্যে ভাতের সঙ্গে মোষের মাংস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ 'ক' (ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, নিবাস, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন কাজ করা), ২৯৫ 'ক' (ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে কোনও ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা করা, যাতে কোনও শ্রেণীর বা গোষ্ঠীর ধর্ম অথবা ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে), ৪২০ (কাউকে ঠকানো এবং অসদুপায়ে সম্পত্তি হাত করার চেষ্টা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন) ধারায় দায়ের হয়েছে এফআইআর।
এদিকে বিজেপি বিধায়ক রাজপুত বলেছেন, ঘটনার কথা জানতে পেরেই তিনি গ্রামবাসীদের "নির্দেশ" দেন যেন এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। তাঁর কথায়, "শনিবার সালাত গ্রামে উরস ছিল। হিন্দুরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং তাঁরা প্রতিবারই এই উরসে অংশগ্রহণ করেন এবং চাঁদাও দেন। প্রতিবছর বড় করে খায়াদাওয়া হয়, এবং নিরামিষ খাওয়ানো হয়। এবারও ১৩ টি গ্রাম থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এসেছিলেন।"
রাজপুত আরও বলেন, "এবছর 'বাবার প্রসাদ' হিসেবে হিন্দুদের ভাত পরিবেশন করা হয়। কিছু অতিথি খেতে আরম্ভ করে দেখেন, তার মধ্যে মাংসের টুকরো এবং হাড় রয়েছে। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হলে পঞ্চায়েত ডাকা হয়, যেখানে প্রধান অভিযুক্ত স্বীকার করে নেন যে ভুলবশত মোষের মাংস পরিবেশন করা হয়েছে। তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেন যে শুদ্ধিকরণের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেবেন। কেউ কেউ তাতে রাজি হলেও বাকিরা আমার কাছে আসেন। আমি গ্রামে যাই এবং এফআইআর করার কথা বলি, যেহেতু এই কাজ জেনেশুনে আমাদের ধর্মীয় আবেগকে আঘাত করার জন্য করা হয়েছে।"
এফআইআর-এ অভিযোগকারী হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের একজন, রাজকুমার রাইকোয়াড় জানিয়েছেন যে পাপ্পু আনসারি নামে স্রেফ একজন অভিযুক্তই আমিষ খাবার পরিবেশন করার জন্য দায়ী, বাকি ২২ জন নির্দোষ। তাঁর দাবি, বাকি নাম যোগ করা হয়েছে বিধায়কের নির্দেশে, যিনি "আমাদের দিয়ে অভিযোগ সই করিয়ে নেন, কী কারণে সই করছি তা না জানা সত্ত্বেও"।
চরখারি থানার স্টেশন হাউস অফিসার অনুপকুমার পাণ্ডে বলছেন, "একটি স্টলে পুরি-সবজি পরিবেশন করা হয়, আরেকটিতে বিরিয়ানি। যাঁরা আমিষ খান, তাঁরা বিরিয়ানি খেয়েছিলেন। পরে জল্পনা ছড়ায় যে বিরিয়ানিতে মোষের মাংস রয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলাই। কিন্তু পরে বিধায়কের হস্তক্ষেপের ফলে বিষয়টি ফের চাগিয়ে ওঠে। আমি তাঁকে বলি, কোনোরকম অপরাধ হয়ে থাকলে এফআইআর করতে। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এফআইআর দায়ের করি।"