/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/IMG-20180917-WA0027.jpg)
এক আগুন দেখালো গাফিলতির হাজার ছিদ্র। যে দিকে তাকাবেন, সেদিকটাই জঞ্জাল। ২০০৮ সালের নন্দরাম মার্কেটের আগুন যে কোনও শিক্ষাই দিতে পারেনি প্রশাসনকে, তা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। কাল বাগরি মার্কেটের চৌহদ্দিতে একটা কথা মুখে মুখে ঘুরছিল - আগাম ফায়ার লাইসেন্স। কী ব্যাপার? না, শহরের ৩২ টা মার্কেট অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা করবে, সেই মর্মে মুচলেকা দেওয়ায় ফায়ার লাইসেন্স। সোজা পথে কি এই কান্ড সম্ভব? শহরের ৩৭ টি বাজারের মধ্যে ৩২ টি বাজারকে এই ভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ দমকল মন্ত্রী তথা মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/IMG-20180917-WA0030.jpg)
দ্বিতীয়ত, বড়বাজারে আগুন লাগলে কী দশা হয়, তা নন্দরাম মার্কেট দেখিয়ে দিয়েছে আজ থেকে দশ বছর আগেই। কিন্তু আজও বড়বাজারের মত জায়গায় আগুন লাগলে কী করতে হবে তা জানে না প্রশাসন। একেই ঘিঞ্জি গলি। তার ওপর ফুটপাথ-সহ রাস্তায় চলে এসেছে পসরার ডালা। ওই সব ডালা স্থায়ী দোকানের চেহারা নিয়েছে। সঙ্কীর্ণতম গলিতে পরিণত হয়েছে বাগরি মার্কেট সংলগ্ন রাস্তা। প্রশাসন কি কখনও ভাবেনি এসব জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তা রোখা যাবে?
আরও পড়ুন: Kolkata Bagri Market fire today live updates: দেড় দিনেও নিভল না আগুন
বাগরি কাণ্ডে গতকাল সকাল থেকেই পরিষ্কার, কোনও ধারণাই নেই প্রশাসন ও দমকলের। বড়বাজারে রাস্তা দখল করে হাজার হাজার ডালা বসার দায় এড়াতে পারে না লালবাজারও। আগুন নেভেনি দেড় দিন পার হলেও। অথচ সাতসকালে দমদম এয়ারপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী যখন পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞেস করেন, কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে? তখন তাঁকে স্পষ্ট ঘাড় নাড়তে দেখা যায়।
রাস্তা এত সরু হওয়ার জন্য দমকলের ল্যাডার ঢুকতে পারেনি। তারের জালেও নাকি আটকে গিয়েছিল। এছাড়াও ল্যাডারগুলোর মেইনটেনেন্স সময়মত করা হয় কী না, উঠছে সেই প্রশ্ন।
বাগরির কয়েকশো দোকানের ফায়ার লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েইছে। কিন্তু বাজারের সব দোকানের লাইসেন্স আছে কি? তা কি খতিয়ে দেখে পুরসভা? ঠাসাঠাসি মালের ভিড় এইসব দোকানে। চলছে উৎসবের বাজার। মার্কেটের রিজার্ভয়ারে ছিল না এক ফোঁটা জল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাল বিকেল পাঁচটার পর জল পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন জলাধারে জল রাখা হলে অল্প হলেও জল পাওয়া যেত। জল সরবরাহ করা দূর অস্ত, শোভনবাবু জানিয়েছেন, আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই এই মার্কেটে। অথচ ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/IMG-20180917-WA0029.jpg)
এদিন দমকলের কাজ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বাগরি মার্কেটের উল্টো দিকের বাড়ির ছাদ থেকে জল দেওয়া হলেও একেবারে পাশের বাড়ির বারান্দা বা ছাদ ব্যবহার করেনি দমকল। এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা ক্রমাগত দাবি করতে থাকেন সেনা নামানোর। দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ডাকা হয়নি সেনা। সেনাবাহিনী এসে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলে রাজ্য সরকারের মুখে নিশ্চিত কালি পড়ত। সাম্প্রতিক অতীত বলছে, পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুল দুর্ঘটনার সময় সেনা না ডাকলে অত সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার কাজ সম্ভব হতো না।
প্রশ্ন অনেক। ছুটির আগের দিনই রাতে আগুন। নন্দরাম মার্কেটেও আগুন লেগেছিল রাতে। সেটাও ছিল ছুটির আগের দিন। বড়বাজারে আগুন লেগে যাওয়ার এটাই নাকি "রেওয়াজ", বাঁকা হাসি সহযোগে মন্তব্য স্থানীয়দের।
৩০ ঘণ্টা পার, নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও এখনও জ্বলছে আগুন#BagriMarket #bagrimarketfirehttps://t.co/MkeLvZ5ZtZ pic.twitter.com/SxnTy6iDaw
— IE Bangla (@ieBangla) September 17, 2018
গাফিলতির শেষ নেই। আগুন যখন ওই মার্কেটের সামনে একটি ডালায় লেগেছিল, তখন ফোন করা হয় ১০০ (পুলিশ) ও ১০১ (দমকল) নম্বরে। অভিযোগ, ১০০-তে স্রেফ ফোন বেজে গিয়েছে, আর ১০১-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই করা যায় নি। দাবি, তখন স্থানীয় দমকল বিভাগে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের ডেকে আনা হয়। ঠিক সময়ে ফোন করা গেলে আগুন হয়ত এত ছড়াতে পারত না। এত বড় বাজারে নিরাপত্তা কর্মীদের ভূমিকাই বা কী ছিল শনিবার রাতে?
যে ভাবে বাগরি মার্কেটে ফাটল দেখা গিয়েছে, তাতে বিল্ডিংটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। অনেকেই ভাবছেন, হয় ভেঙে পড়বে বা ভাঙা হবে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে, একটু-আধটু মেরমতি করে ফের চালু হয়ে যাবে মার্কেট। উদাহরন হাতের সামনেই, নন্দরাম মার্কেট। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিক জানিয়ে দিয়েছেন, "ফরেন্সিক পরীক্ষা না হলে ভিতরেই ঢুকবো না।" আর কবে শিক্ষা নেবে প্রশাসন?