Advertisment

দীর্ঘস্থায়ী বাগরির আগুন, অনুসন্ধানে বাড়ছে রহস্য

বড়বাজারের মার্কেটে সাধারনত আগুন লাগে ছুটির দিনের আগের রাতে। তারপর পুড়ে ছাই। কান্না ও হাহাকারই সম্বল হয়ে দাঁড়ায় ব্যবসায়ীদের। এই আগুন লাগা নিয়ে প্রতিবারই বহু প্রশ্ন দেখা দেয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bagree market Day 2 Express Photo Shashi ghosh

বাগরি মার্কেটের আগুনরহস্য় আদৌ প্রকাশ পাবে! ছবি- শশী ঘোষ

বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট দুদিনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য। এই অগ্নিকাণ্ডের পৃথকভাবে তদন্ত করবে দমকল ও পুলিশ। রাজ্য প্রশাসন ওই বাজারের মালিককে অবিলম্বে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশকে। নবান্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শহরের অন্য বাজারগুলোর অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার কথাও বলা হয়েছে সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে। জানা গিয়েছে, বুধবার ফের নবান্নে বৈঠকে বসবেন মন্ত্রীগোষ্ঠী।

Advertisment

বাগরি মার্কেটের আগুন লাগা নিয়ে রবিবারই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। তাঁরা দাবি করেছিলেন, আগুন তিন তলায় এবং মার্কেটের বাইরে অস্থায়ী ডালায় লেগেছিল। কীভাবে তিন তলায় আগুন লাগে? ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো আরও বেশ কিছু তথ্য। বাগরি মার্কেট নিয়ে শরিকি বিবাদ রয়েছে দীর্ঘদিনের। যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। বাগরির ব্যবসায়ী সংগঠনের সহ-সভপাতি মহম্মদ কাসেম বলেন, "বাগরি পরিবারের মধ্যে শরিকি বিবাদ ছিল।"

Kolkata Bagri market fire অগ্নিকাণ্ডের রহস্যে আচ্ছন্ন চারদিক

তবে রহস্য এখানেই শেষ নয়। বাগরির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বাগরি মার্কেটের মূল ভবনটি তৈরি হয়েছিল ৭৭ বছর আগে, ১৯৪০ সালে। তারপর ১৯৫৫ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ তলের নির্মান হয়। এখন এই মার্কেটে ৯৫৭টি রুম আছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যা এক হাজারের ওপর। সূত্রের খবর, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের ছজন আইনজীবী এসেছিলেন বাগরি মার্কেটে। কেন এসেছিলেন তা নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না।

অন্যদিকে শনিবার ছিল বাগরি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা। নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই দিন। সেখানে সভাপতি হয়েছেন আশুতোষ সিং। মহম্মদ কাসেম সহ-সভাপতি। মহম্মদ কাসেম বলেন, "শনিবার আমাদের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতেই আগুন লেগে যায়। ইতিমধ্যে কিছু ব্যবসায়ীর পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে।" শর্ট সার্কিট থেকে কোনভাবেই আগুন লাগেনি বলে দাবি করে তিনি জানান, বাজারের সমস্ত বিদ্যুৎ অফ করে দেওয়া হয় রাত নটায়। বাজারও বন্ধ হয়ে যায় তার আগেই।

আরও পড়ুন: দমকলের বিরুদ্ধে খেপে আগুন বাগরির ব্যবসায়ীদের একাংশ

সূত্রের খবর, বাগরি পরিবারের মধ্যে এই মার্কেট নিয়ে লড়াই চলছে প্রায় প্রথম থেকেই। বাজার নির্মান করেছিলেন শগুনচাঁদ বাগরি। তিনি মারা যাওয়ার পর পরিবারের ভেতর মার্কেট দখল নিয়ে বিবাদ শুরু হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, এই সম্পত্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরেই মামলা চলছে।নির্মাতার তিন ছেলে, নরসিং, গোপালচন্দ্র ও কিষানলাল। শগুনচাঁদের পর নরসিং বাগরি এই কারবার সামলাতেন। গোপাল বাগরির কোনও সন্তান ছিল না। নরসিং বাগরির নাতি কৃষ্ণকুমার (মনু) বাগরির স্ত্রী রাধা বাগরি দীর্ঘদিন এই মার্কেট পরিচালনা করে এসেছেন। মনু বাগরি ২০০৯ সালে মারা যান। গোপাল বাগরির ২০০৪ সালে মৃত্যু হয়। এদিকে কিষানলালের তিন ছেলে। এক ছেলে  মোহনলাল বাগরিও একজন ডিরেক্টর। অভিযোগ, তাঁকে হটিয়ে দায়িত্ব নেন রাধা বাগরি। রাধার ভাইপো অর্থাৎ নরসিংয়ের নাতির ছেলে বরুন বাগরি এখন ডিরেক্টর। তবে এদিন একাধিক ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Kolkata Bagri market fire আগুন নিভেও নেভে না

ব্যবসায়ীরাই জানালেন, পাশের অমরতলা বাজারে আগুন নিভিয়েছিল বাগরির রিজার্ভয়ারের জল।  অথচ নিজেদের ভবনে যখন আগুন লাগলো, তখন রিজার্ভয়ারে জল নেই। রহমান স্টোরের মালিক মহম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, "শনিবার পুরসভা জল দিয়েছিল।" অন্যদিকে সি ব্লকের মনি স্টোরের মহম্মদ কাজিম বলেন, "তিনদিন আগে বাড়ির জল বন্ধ হয়েছিল। পাম্প খারাপ হয়ে পড়ে ছিল।" 

একটা গোটা বাজার পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অনুসন্ধান করতে বেরিয়ে এলো একাধিক প্রশ্ন। মার্কেটের মালিকদের পারিবারিক বিবাদ, জল না থাকার নানা কারণ, শনিবার সমিতির বৈঠক, শুক্রবার আইনজীবীদের উপস্থিতি, সম্পত্তি নিয়ে মামলা, ডালা থেকে না তিন তলার ভিতর থেকে আগুন? এমন নানা প্রশ্ন কিন্তু রহস্যের গন্ধ বাড়াচ্ছে।

fire
Advertisment