নাগালের মধ্য়ে ভেটকির দাম, সৌজন্য়ে রাজ্য সরকারের মৎস্য় দফতর
জয়প্রকাশ দাস
ভেটকি পাতুরির নাম শুনলে কার না জিভে জল আসে! সাদা সর্ষে, কালো সর্ষে, পোস্ত বাটা দিয়ে কলাপাতায় তৈরি ভেটকি পাতুরি। আম বাঙালির পছন্দের রেসিপি। তাছাড়া ভেটকি ভাপা, দই ভেটকি, ফিস কাটলেট, টমেটো ভেটকি রেসিপির যেন কোনও শেষ নেই। অথচ রেস্তোরাঁয় ভেটকির ডিশ অথবা বাজারে কাঁচা মাছ, দুইই নাগালছাড়া দামে বিকোচ্ছে।
এবার এ রাজ্য়ে আয়ত্তের মধ্য়ে আসতে চলেছে ভেটকি মাছের দাম। সৌজন্য়ে রাজ্য সরকারের মৎস্য় দফতর।
এই রাজ্য়ে প্রথম ভেটকির মাছের হ্য়াচারি তৈরি করতে চলেছে মৎস্য দফতরের অধীনস্থ সংস্থা স্টেট ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরশেন লিমিটেড। রুই-কাতলার হ্য়াচারি থাকলেও সারা পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই ধরনের কোনও হ্য়াচারি কোথাও নেই বলে জানিয়েছেন সরকারি এই সংস্থার ম্য়ানেজিং ডিরেক্টর সৌম্য়জিৎ দাস। "এই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। ওই টাকার জন্য় ইতিমধ্য়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেলেই হ্য়াচারি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। দিঘা এবং আলমপুরে ১০ হেক্টর জমি দেখা হয়ে গিয়েছে, এর মধ্যে যে কোনও একটি জায়গাতে হ্যাচারি তৈরি হবে।"
কী থাকবে এখানে? জানা গিয়েছে, অত্য়াধুনিক এই হ্য়াচারির সঙ্গে থাকবে ট্রেনিং সেন্টার ও ল্য়াবরেটরি। কর্মীদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে এই হ্য়াচারির কাজে কখনও দক্ষ শ্রমিকের অভাব না হয়। ল্য়াবরেটরিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে প্রতিনিয়ত।
ভেটকির সঙ্গে অন্য় মাছ চাষ করা যায় না। কারণ ভেটকি অন্য় মাছের চারা খেয়ে নেয়। কিন্তু হ্য়াচারিতে ভেটকির চারা তৈরি করা হলে তাকে বিশেষ খাবার খাওয়ানো হবে, যার ফলে ভেটকি অন্য মাছের চারা খেয়ে ফেলবে না। তখন অন্য় মাছের সঙ্গেও এই হ্য়াচারিতে ভেটকি চাষ করা যাবে। WBSFDC-র MD দাবি করছেন, ভেটকিকে বিজ্ঞানসম্মত খাবার খাওয়ানোর ফলে চারা ভেটকি রোগের হাত থেকেও অনেক বেশি রেহাই পাবে এবং তার বৃদ্ধিও হবে দ্রুত। তাতে লক্ষ্মীলাভ হবে সরকারের।
বাজারে দামি মাছের মধ্য়ে অন্য়তম ভেটকি। যত বড় মাছ, তার তত কদর, দামও বেশি। এই হ্য়াচারির ফলে কি ভেটকির দাম কমবে? সৌম্য়জিৎবাবু জানাচ্ছেন, এখানে এক একটা চক্রে ১০ লক্ষ চারা উৎপাদন হবে। সপ্তাহে ৩টি পর্যন্ত চক্র তৈরি করা সম্ভব, অর্থাৎ সপ্তাহে ৩০ লক্ষ চারা উৎপাদন হবে এই হ্য়াচারিতে। সমস্ত চারাই বিক্রি হবে, রাজ্য়ে বাড়বে ভেটকির চাষ। অর্থনীতির নিয়ম মেনে চাহিদা অনুযায়ী জোগান বৃদ্ধির সুবাদে বাজারে ভেটকি তখন সস্তা হতে বাধ্য।