চলতি বছরে মে মাসের শুরুতেই গালওয়ানে ভারত-চিন সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। বিগত এক মাস ধরেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছিল লাল ফৌজ। যা উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বিশেষ করে ১৯৯৩-এর ধারার পরিপন্থী বলে বৃহস্পতিবার জানান বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
গত ১৫ জুন সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে গালওয়ানে ইন্দো-চিন সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় সেনাকর্মীর। উত্তেজনা প্রশমণে ইতিমধ্যেই উভয় দেশের সেনা পর্যায়ের আলোচনা চলছে। দু'তরফেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বাড়তি সেনা সরানোয় সম্মত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যেই বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রথমবার জানানো হল যে, মে মাসের শুরুতেই গালওয়ানে ভারত-চিন সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে যে, ১৫ জুনের মতো খুব বড় মাপের সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও মে মাসের প্রথম দিকে গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ (পিপ-১৪) ইন্দো-চিনা বাহিনী সংঘর্ষে জড়ায়। এরপর থেকেই সীমান্তের ওই এলাকায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দু'দেশের বাহিনীকে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, 'মে মাসের শুরুতেই গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় বাহিনীতে নজরদারিতে বাধা দেয় চিনা সেনারা। যা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও প্রটোকল বিরোধী। গ্রাউন্ড কমান্ডাররা সম্পূর্ণ বিষয়টি জানিয়েছিল।'
ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সাং ওয়েইডং বেজিংয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, '৬ মে গালওয়ান উপত্যাক প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে চিনা ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছিল ভারতীয় সেনা। উত্তেজনা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থায়ী অবস্থানের জন্য সেখানে ভারতীয় বাহিনী কাঠামোও বানিয়েছিল। এরপরই দু'দেশের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।' ১৫ জুনে প্রসঙ্গ টেনে ওয়েইডং দাবি করেন, 'গালওয়ান চিনের ভূখণ্ডে অবস্থিত। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশ করায় সেখানে প্রথম সংঘর্ষ হয়। বিগত বহু বছর ধরে সীমান্তে শান্তি বজায় রেখেছে দুই দেশের সেনা। কিন্তু, চলতি বছর থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে ও বারে বারেই নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করছে। ফলে ওই অঞ্চলের স্থিতাবস্থার বদল ঘটছে।' গোটা পরিস্থির জন্য ভারতকেই দায়ী করেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত।
যদিও ওয়েইংয়ের দাবি নস্যাৎ করেছেন অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তাঁর অভিযোগ, 'প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্বন্ধে সম্যক ধারনা আছে বাহিনীর তাই ভারত কখনো সেই গণ্ডি পেরোয় না। সমস্ত নির্মাণ হয় এই দিকে। কিন্তু চিন সেভাবে কাজ করে না।'
চিনা রাষ্ট্রদূত সাং ওয়েইডং আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, 'সংঘর্ষের পর দু'দেশই উত্তেজনা প্রশমণে রাজি হয়েছে। সেনা পর্যায়ের আলোচনা জারি রয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি অনুসারে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন