সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়ামের অনুমোদিত ন'টি নামের মধ্যে তিন জনই মহিলা। এই প্রথম এক সঙ্গে তিন জন মহিলা বিচারপতির নিয়োগ হতে চলেছে দেশের শীর্ষ আদালতে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে যে, কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগারাথানা, তেলাঙ্গানা হাইকোর্টের বিচারপতি হিমা কোহলি ও গুজরাট হাইকোর্টের বেলা ত্রিবেদীকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের কলেজিয়াম অনুমোদন করেছে। বিচারপতি বি ভি নাগারাথনা ২০২৭ সালে ভারতের প্রথম মহিলা বিচারপতি হতে পারেন।
কলেজিয়ামের অনুমোদনপ্রাপ্ত নামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিচারপতি কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অভয় শ্রীনিবাস ওকা, সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জিতেন্দ্র কুমার মহেশ্বরী, কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি সি টি রবিকুমার, গুজরাত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিক্রম নাথ, কেরালা হাইকোর্টে বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ।
কয়েক দিন আগেই অবসর নিয়েছেন বিচারপতি আর নারিম্যান। তিনি ২০১৯ সাল থেকে কলেজিয়ামের সদস্য। জেষ্ঠতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। যদিও তাঁর সঙ্গে কলেজিয়ামের অন্য সদস্যদের মতপার্থক্য ছিল। ঐক্যমত না হওয়ার দরুন ২০১৯ সালে নভেম্বরে দেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে রঞ্জন গগৈর অবসরের পর থেকে কলেজিয়াম কেন্দ্রীয় সরকারকে শীর্ষ আদালতে নিয়োগের জন্য একটিও সুপারিশ পাঠায়নি। ১২ অগস্ট বিচারপতি নারিম্যান অবসর নিয়েছেন। তারপরই ঐক্যমতের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য ন'জন বিচারপতিকে কলেজিয়ামের অনুমোদন যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী।
প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট পি এস নরসিমাকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসাবে সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে কলেজিয়াম। বিচারপতি পি এস নরসিমা ভারতের আইনি ইতিহাসের পঞ্চম আইনজীবী যিনি বার থেকে সরাসরি নিযুক্ত হচ্ছেন। রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তরফে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট পি এস নরসিমা। এছাড়াও বিসিসিআই প্রশাসক সংক্রান্ত মামলাতেও কাজ করেছেন তিনি।
বর্তমানে দেশের হাইকোর্টগুলোর সিনিয়র বিচারপতিদের মধ্যে অন্যতম বিচারপতি ওকা। কোভিজকালে নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার সংক্রান্ত তাঁর একাধিক নির্দেশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মহারাষ্ট্র হাইকোর্টে বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় উদ্ধব সরকারের কোভিড মোকাবিলা সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। সেই সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েও তাঁর রায় উল্লেখযোগ্য।
বিক্রম নাথ বর্তমানে গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি পদে রয়েছেন। সে রাজ্যের করোনার বাড়বাড়ন্ত, হাসপাতালে শয্যা না থাকা, ওষুধের কমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো। কোর্টরুমের শুনানি বিচারপতির নাথের নির্দেশেই ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
বিচারপতি মহেশ্বরী আগে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকার ভেঙে দিতে সুপ্রিম কোর্টের এক সিনিয়র বিচারপতি হাইকোর্টের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। এর পরদিনই সিকিম হাইকোর্টে বদলি করে দেওয়া হয় বিচারপতি মাহেশ্বরীকে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে কলেজিয়ামের ছাড় পেয়েছেন সি টি রবীকুমার। কেলারা হাইকোর্টের অন্যতম সিনিয়র বিচারপতি রবীকুমার। মাদ্রাস হাইকোর্টের অন্যতম সিনিয়র বিচারপতি হেলন এম এম সুন্দরেশ।
প্রস্তাবিত ন'জনের নাম গৃহীত হলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে তেত্রিশ। তবে, তারপরও এক জন বিচারপতির পদ ফাঁকা থাকবে। কারণ এ দিনই অবসর নিচ্ছেন বিচারপতি নবীন সিনহা।
প্রধান বিচারপতি রামানা ছাড়াও পাঁচ সদস্যের কলেজিয়ামের অন্যন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি এ এমখানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি নাগেশ্বর রাও।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন