লকডাউনের সুফল নজরে আসছে। ২১ দিনের লকডাউনের ফলে খুব সামান্য হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমছে, যা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। লকডাউনের ফলে সামাজিক মেলামেশা কমানো গিয়েছে। যার জেরে ভাইরাস ছড়াচ্ছে কম। এই প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দিনে মহামারীর প্রকোপ কমানো সম্ভব। চেন্নাইয়ের ইনস্টিট্যুট অফ ম্যাথামেটিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিনহা ও সৌম্য ঈশ্বরণের পর্যালোচনায় এনমটাই আভাস মিলেছে।
বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিনহা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিছেন যে, আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে ভারতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হবেন বলে অনুমান। লকডাউন না হলে সেই সংখ্যা পৌছতে পারত প্রায় ৩৫ হাজারে। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ কোভিড-১৯ পজেটিভ, যা ৫ই এপ্রিলের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুন। কিন্তু, ভাইরাস প্রজননের এই হারকে মারাত্মক বলে মানতে নারাজ তিনি। মার্চের তুলনায় ভারতে করোনা প্রজননের এই (এপ্রিল৫-১১) হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম বলেই মনে করেন সিনহা। ভাইরাসের প্রজনন বলতে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা অন্যদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরাকে ধরা হয়।
গণনায় প্রকাশ, ভারতে প্রথমদিকে একজন করোনা আক্রান্তের থেকে অন্য ১.৮৩ জনের দেহে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটছিল। এপ্রিল ৬ থেকে ১১-এর মধ্যে সেই হার কমে হয়েছে ১.৫৫ জন। বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিনহার কথায়, 'নিশ্চিতভাবে এখনই বলা সম্ভব না হলেও সম্ভাবত লকডাউনের কারণেই করোন বৃদ্ধির গ্রাফ ভারতে কমছে।' তবে, এই প্রবণতা যেকোনও সময় বদলে যেতে পারে বলে জানান তিনি। দেশে মহারাষ্ট্রে করোনা প্রকোপ এপ্রিলের প্রথম দিকে তুলনায় কম থাকলেও ক্রমেই তা বেড়েছে। আবার তেলেঙ্গানায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল করোনা সংক্রমরে হার বেশি। সিতাভ্র সিনহা মনে করেন, নিজামুদ্দিনের ঘটনার জন্যই এই বৃদ্ধি।
গাণিতিক এই পর্যালোচনার ভিত্তিতেই কেন্দ্র দেশজুড়ে আরও দু'সপ্তাহ লকডাউন বাডা়নোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভাইরাসের প্রজননের হার কমেছে মানেই রোগের শেষ পর্যায়ের শুরু- এটা মনে করা অনুচিত হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী সিনহা। তাঁর মতে, করোনা পরীক্ষার বেশি সংখ্যকের পজেটিভ ধরা পড়ল মানেই ভাইরাসের প্রকোপ কমছে তা মনে করাও মুর্খামি হবে। গ্রাফের প্রবণতা অনুশারে, ভাইরাসটি যে হারে ছড়াচ্ছিল তা তুলনায় হ্রাস পাবে।
আরও পড়ুন- কোন কৌশলে লকডাউন শিথিল? পথ খুঁজছে কেন্দ্র
প্রজনন হ্রাসের সঙ্গেই করোনা পরীক্ষার মোট সংখ্যার সঙ্গে পজেটিভের সংখ্যা তারতম্যও বিজ্ঞানীদের স্বস্তি দিচ্ছে। ভারতে করোনা পরীক্ষার হার আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু, সেই তুলনায় পজেটিভের সংখ্যা নির্দিষ্ট হার বজায় রাখছে। মাত্রা অতিরিক্ত হারে বাড়েনি। ৩রা এপ্রিলের পর দেশে করোনা পজেটিভের সংখ্যা একধাক্কায় বেড়েছিল তবলিঘি জমায়েতের জন্য। তবুও, তা মোট আক্রান্তের নিরিখে মাত্র ৪ শতাংশের আশেপাশে। অর্থাৎ, প্রতি ৫০ পজেটিভের মাত্র ২ জন জমায়েতকারী করোনা আক্রান্ত।
'বর্তমানে দেশে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে। রোজ প্রায় ১৫-১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। দেখার বিষয় যে, পরীক্ষা বাড়লেও পজেটিভের সংখ্যা একটা চৌহদ্দির মধ্যে সীমিত রয়েছে কিনা। ভারতে প্রবণতায় প্রকাশ পরীক্ষা বাড়লেও পজেটিভের সংখ্যা নির্দিষ্ট হারেই রয়েছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে সংক্রমণ খুব একটা ছড়াচ্ছে না। তবে, হঠাৎ পজেটিভের সংখ্যা বাড়ে গেলে তা চিন্তার বিষয়।' এমনটাই মনে করেন আইসিএমআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অফ এপিডেমিওলজির বিজ্ঞানী তরুণ ভাটনাগর।
Read the story full in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন