একটি ছোট বিরতির পরে স্কুলের ঘণ্টা বেজে উঠল। ক্লাস ১১এ-এর ছাত্ররা তাদের ব্যাগ থেকে পদার্থবিদ্যার বিশাল পাঠ্যবই বের করল। ক্রিস্টিনা, প্রথম বেঞ্চে বসে। তার চুল দুটি ঝরঝরে ফ্রেঞ্চ বিনুনিতে বিভক্ত। নোটবুকটি সামনে খোলা, নোট নেওয়ার জন্য। বছর ১৬-র ক্রিশ্চিনা মণিপুরের সেই ৩১ পড়ুয়ার অন্যতম, যারা চলতি সপ্তাহের শুরুতে দিল্লির আরকে পুরম সেক্টর ৫-এর সরকারি সহশিক্ষামূলক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে যোগ দিয়েছিল।
মণিপুরজুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ায় কুকি পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে উপত্যকার মেইতিসদের লড়াই হয়েছে। শত শত পরিবার বাস্তুচ্যুত। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তাঁদের সন্তানদের নিরাপদে অন্য রাজ্যে পাঠিয়েছে। লক্ষ্য একটাই, যাতে তাদের স্কুলের লেখাপড়া ব্যাহত না-হয়। যখন তারা তাদের বাড়ি থেকে এই দীর্ঘ পথে যাত্রা করেছিল, তাদের কারও সঙ্গে ছিল বড় ভাই বা বোন। কারও সঙ্গে পিসি। কারও সঙ্গে আবার তার কাকা।
দিল্লির শিক্ষা বিভাগের সূত্রে খবর, ৩ মে হিংসা শুরুর পর থেকে মণিপুরের ১৩৮ জন শিশু রাজধানীর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এখনও ২৯০টি আবেদন বিবেচনাধীন। ক্রিস্টিনার বাবা-মা এবং দুই ছোট ভাইবোন ইম্ফলের বাড়িতে ফিরে গেছে। আর, ক্রিশ্চিনা নিজে এখন দিল্লির মুনিরকা এলাকায় তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। বাবা-মা, ভাই-বোনেদের কথা জিজ্ঞাসা করলে ক্রিশ্চিনা দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখের জল মুছল। তারপর বলল, 'আমি চার দিন আগে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি। অবাক হচ্ছি এই দেখে যে, সবাই আমাকে কত আপন করে নিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে। তারপরও আমি তাদের খুব মিস করি।'
আরও পড়ুন- শ্রীনগরে মহরমের মিছিলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস, জানেন কি?
ক্রিশ্চিনা যখন এই কথা বলছে, সেই সময় তার বছর ১৭-র এক বন্ধু সাহস দেওয়ার জন্য শক্ত করে ক্রিশ্চিনার হাত চেপে ধরল। ওই বন্ধু ক্রিশ্চিনার পাশে একই বেঞ্চে বসে ছিল। কিন্তু, এই সান্ত্বনা কতক্ষণ। ক্রিশ্চিনা এখনও হামেশাই তার মা-বাবা, ভাই-বোনদের কাছে না-পাওয়ার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করে। এই কান্নার কারণ, তার পরিবার এখন ইম্ফলের বাড়িতে থাকে। আর, সে নিজে থাকে দিল্লিতে আত্মীয়দের কাছে।