ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ আগেই অর্থনীতির ওপর আঘাত হেনেছিল। এবার বন্যা, সেই আঘাতকেই শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যাতে বিধ্বস্ত পাকিস্তানের ডিজিপি বৃদ্ধির হার পাঁচ থেকে তিন শতাংশে নেমে এসেছে। শনিবার সেদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এমনটাই জানিয়েছে।
ন্যাশনাল ফ্লাড রেসপন্স অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনএফআরসিসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জাফর ইকবাল প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের সময় জানিয়েছেন, পাকিস্তানের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।
পাকিস্তানের সরকারি সংবাদ সংস্থা প্রেস নিউজ এজেন্সি ইকবালকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে বিভিন্ন সংকটে বিধ্বস্ত পাকিস্তান। যার জেরেই সেদেশে মোট দেশজ পণ্য বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দুই শতাংশ কমে গিয়েছে। এর প্রধান কারণ বন্যা। দ্বিতীয় কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের বিলম্বিত আর্থিক অনুমোদন। আর, তৃতীয় কারণ হল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
ডন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইকবাল জানিয়েছেন, ২০১০ সালে 'সুপার ফ্লাড' প্রায় ২ কোটি মানুষের ক্ষতি করেছিল। আবার এবারের বন্যায় পাকিস্তানে ৩ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৬০ লক্ষেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্তকে ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবের জন্যই এমনটা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ইকবাল। আর, সেই অভাবের জন্যই পাহাড় থেকে নেমে আসা আচমকা জলপ্রবাহে ভেসে গিয়েছেন অসংখ্য মানুষ, গবাদি পশু, ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।
এনএফআরসিসির তরফে জানানো হয়েছে যে, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্রসংঘ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরোদমে কাজ করছে। সোমবারের মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে ত্রাণের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে আরও কতটা ত্রাণ প্রয়োজন, তার মূল্যায়ন করা হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,৩৯৬। আহতর সংখ্যা ১২,৭০০-র বেশি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ১৭ লক্ষেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬,৬০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ও ২৬৯টি সেতুও।
আরও পড়ুন- বিহারের রাজনীতি সামলাতে অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষককে দায়িত্ব নাড্ডার, কে তিনি, কী তাঁর সাফল্য?
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোটা ৮১টি জেলা। যার মধ্যে রয়েছে বেলুচিস্তানের ৩২টি, সিন্ধুর ২৩টি এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় ১৭টি। এই সব জেলাগুলোকে 'দুর্যোগ-আক্রান্ত' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর দু'দিনের পাকিস্তান সফরের শেষ দিনে উদ্ধারকাজ, ত্রাণের ব্যবস্থা ও ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে আশা করছে শেহবাজ প্রশাসন।
সফরের প্রথম দিনে গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দেন। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে সমালোচনার সুরে জানান যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য পাকিস্তানও অনেকাংশে দায়ী। একইসঙ্গে গুতেরেস এটাও জানান যে বর্তমানে বন্যায় পাকিস্তান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার চায়, সেদেশের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক দুনিয়া এগিয়ে আসুক। গত তিন দশকে রেকর্ড বর্ষার বৃষ্টির জন্য ব্যাপক বন্যা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে পাকিস্তানের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
Read full story in English