প্রধানমন্ত্রী মোদীর মঙ্গলবারের ২০ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পর বুধবার বিকাল ৪টা নাগাদ সপারিষদ সাংবাদিক সম্মেলন করে এই প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ের (১৫টি ঘোষণা) বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এক নজরে এদিনের ঘোষণাগুলি-
* ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য এদিন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, ''ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য মোট ৬টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই শিল্পে ঋণের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৪ বছরের জন্য এই টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এর মেয়াদ থাকবে ৩১ অক্টোবর, ২০২০ পর্যন্ত। এতে এক বছরের সুদ দিতে হবে না। ১০০ কোটি টাকার লেনদেন পর্যন্ত ২৫ কোটির ঋণ মিলবে। এতে উপকৃত হবে ৪৫ লক্ষ শিল্প ইউনিট''।
* এনপিএ (অনাদায়ী ঋণ)-এর চাপে কাবু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও ঋণ দেওয়া হবে। এই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে। ঋণগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসা বাড়াতে ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
* এবার থেকে সরকারি কাজের ক্ষেত্রে ২০০ কোটি পর্যন্ত গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হবে না। অর্থাৎ ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং অতি ক্ষুদ্র সহ দেশিয় সংস্থাগুলির কাজের ক্ষেত্র এর ফলে প্রসারিত হবে। এতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় নামত হত দেশিয় সংস্থাগুলিকে।
* ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং অতি ক্ষুদ্র ক্ষেত্রকে পুনর্সজ্ঞায়িত করা হয়েছে। নয়া নিয়মে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রের বিনিয়োগ-লোনদেনের সীমা যথাক্রমে ১ কোটি-৫কোটি, ১০কোটি-৫০কোটি, ২০কোটি-১০০কোটি টাকা।
ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
* ইপিএফ ১২ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ কাটা হবে। বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইপিএফ। এদিনের ঘোষণা অনুযায়ী, বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে আগামী ৩ মাস ইপিএফ বাবদ মূল বেতনের (বেসিক পে) ১০ শতাংশ টাকা কাটা হবে এবং সংস্থাগুলিও কর্মী প্রতি ১০ শতাংশ করেই ইপিএফ জমা করবে। এতদিন ১২ শতাংশ করে উভয়ের থেকেই ইপিএফ বাবদ কাটা হত। নয়া নিয়ম লাগু হলে কর্মীদের হাতে নগদের যোগান বাড়বে এবং সংস্থাগুলির ব্যায়ভার কিছুটা লাঘব হবে বলে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সরকারি কর্মীদের জন্য চলতি নিয়ম অনুয়ায়ী ১২ শতাংশ করেই ইপিএফ বাবদ দেবে সরকার। তবে সরকারি কর্মীদের থেকে ১০ শতাংশ ইপিএফ কাটা হবে, যাতে তাঁদের হাতেও নগদের যোগান বাড়ে।
* ২০১৯-২০ সালের আয়করের সময়সীমা ৩১ জুলাই, ২০২০ ও ৩১ অক্টোবর ২০২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর ২০২০ করা হয়েছে ও ট্যাক্স অডিটের সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর ২০২০ করা হয়েছে।
* যাঁরা বেতনভোগী নন, তাঁদের হাতে যাতে বেশি নগদ থাকে, সে কারণে টিডিএস ও টিসিএস উভয় ক্ষেত্রেই বর্তমান হার থেকে ২৫ শতাংশ কম অর্থ কেটে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কনট্র্যাক্ট, প্রফেশনাল ফি, সুদ, মজুরি, ডিভিডেন্ড, কমিশন, ব্রোকারেজ ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই টিডিএসে এই কম হার প্রযুক্ত হবে। ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষ থেকে আগামী ৩১ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত এই নিয়ম লাগু থাকবে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সীতারামন বলেন, ''আত্মনির্ভর ভারত গড়তে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্যই এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ৫টি স্তম্ভের কথা বলেছেন। অর্থনীতি, পরিকাঠামো, সিস্টেম, ডেমোগ্র্যাফি, চাহিদা। স্থানীয় ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্র্যান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে''। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ''সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবে এই পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী''।
প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলায় মঙ্গলবার ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই আর্থিক প্যাকেজ আদতে কী? কোন খাতে কীভাবে খরচ করা হবে, তার বিশদ ব্যাখ্যা দিতেই আজ থেকে আগামী তিন দিন প্রত্যহ সাংবাদিক বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
Read the full story here in English