না-পাঠানো চিঠিরা স্তূপাকৃতি হয়ে রয়েছে এক ডাকঘরে। এরকম কথা শুনলে কেউই খুব আকাশ থেকে পড়বেন না, কারণ ডাকে চিঠি পাঠানোর অভ্যাস ভারতীয় নাগরিকরা প্রায় ছেডে়ই দিয়েছেন। ডাকঘরে এখন গঙ্গাজল পাওয়া যায়। তবে গোটা ডাক ব্যবস্থার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটাতে ওড়িশার এই ডাকঘরটি একাই যথেষ্ট হয়ে উঠতে পারে। ২০০৯ থেকে ২০১৭, দশ বছর ধরে এই ডাকঘরটি থেকে কোনও চিঠি বিলি হয়নি।
বিষয়টি মঙ্গলবার ভদ্রকের ওদাঙ্গা ডকঘরেরই এক কর্মীর নজরে আসে। ওই ডাকঘরের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার রামচন্দ্র পাহান। সে ডাকঘরে এখন পড়ে আছে হাজারো চিঠি ও অন্যান্য সামগ্রী। তার মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, চাকরির অনুমোদনের চিঠি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি এবং অন্যান্য অফিসিয়াল নোটও। স্থানীয় মানুষ স্তূপাকৃতি চিঠির মধ্যে বিজেডি-র সাংসদ অর্জুন চৌহানের ঠিকানা লেখা চিঠিও খুঁজে পেয়েছেন।
ভদ্রকের ডাক বিভাগের এক কর্মী জানিয়েছেন, দেড়হাজারের মত চিঠি খুঁজে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে কয়েকশো মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেই একটা চিঠি খুঁজে পেয়েছি, যেটা ২০১১ সালে ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে স্থানীয় একটি ছেলেকে পাঠানো হয়েছিল।’’
ওদাঙ্গা পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ কিশোর পাধিয়ারি বলেছেন, ‘‘পোস্টঅফিস চত্বরে খেলতে গিয়ে এই চিঠিগুলি আবিষ্কার করে এলাকার বাচ্চারা। তারা দেখে কিছু বস্তার মধ্যে থেকে চিঠি বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। বয়সে একটু বড় যারা, তারা বুঝতে পারে বেশ কিছু খামের মধ্যে এটিএম কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই এবং প্যানকার্ড রয়েছে। তারা বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানায়।’’
ওই পোস্টঅফিসটি চলছিল একটি পরিত্যক্ত স্কুলবাড়িতে। কিছুদিন আগে সেটি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়। যখন নতুন বাড়িতে ডাকঘর স্থানান্তরিত হয়, তখন রামচন্দ্র পাহান ওই চিঠিপত্রগুলি বস্তায় ভরে অফিস বিল্ডিংয়ের বাইরে ফেলে দিয়ে যান।
ওড়িশা র ডাক বিভাগের মুখ্য অধিকর্তা সন্তোষ কুমার কামিল্যা জানিয়েছেন, ‘‘রামচন্দ্র পাহান সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন না। তাঁকে ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সাসপেনশনেরই সমতুল্য। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছিল না।’’
রামচন্দ্র পাহান আগে গ্রামীণ ডাক সেবক- মেইল ডেলিভারার পদে কাজ করতেন এবং বিভাগ-অতিরিক্ত কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। গত জুলাইয়ে তাঁকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার পদ দেওয়া হয়।
১০ বছর ধরে কর্তব্যে কেন গাফিলতি করেছেন, এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য রামচন্দ্র পাহানকে পাওয়া যায়নি। ভদ্রকের পোস্টাল সুপারিনটেনডেন্টও এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটল, তার জবাব দেননি।
ভুবনেশ্বরের এক পদস্থ ডাক বিভাগের কর্তা এলাকার মানুষ এতদিন ধরে কেন এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ জানাননি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তবে ডাকবিভাগের কর্মীরা বলছেন, এক দশক ধরে চলা এরকম কাণ্ড পোস্টাল ইনস্পেকশন টিমের নজরে আসা উচিত ছিল। বছরে একবার করে প্রতিটি ব্রাঞ্চ অফিস পরিদর্শনের দায়িত্ব থাকে ওই টিমের।
ডাকঘরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এলাকার মানুষের কাছে এতদিনের না পৌঁছানো চিঠি ডেলিভারি করা হবে। তবে কালের নিয়মে যেসব খামের উপর থেকে নাম-ঠিকানা মুছে গেছে, তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।