Advertisment

৮ মাস ধরে 'নিখোঁজ' ছেলের খোঁজে মাটি খুঁড়ে চলেছেন কাশ্মীরের এই প্রৌঢ়

সন্তানের খোঁজে বাবার এই নিদারুণ পরিণতি এখন চর্চার বিষয় উপত্যকায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক হাতে বেলচা, আরেক হাতে কোদাল। তাই নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। তারপর মাটি খুঁড়ে চলেছেন মনজুর আহমেদ ওয়াগায়।

এক হাতে বেলচা, আরেক হাতে কোদাল। তাই নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। তারপর মাটি খুঁড়ে চলেছেন মনজুর আহমেদ ওয়াগায়। গত আট মাস ধরে একই কাজ করে চলেছেন কাশ্মীরের এই ব্যক্তি। একটাই লক্ষ্যে, একদিন ঠিক মাটি খুঁড়ে হারানো ছেলের দেহ খুঁজে পাবেন তিনি। কয়েক দিন পরেই নিখোঁজ সেই ছেলের বয়স হবে ২৫। সন্তানের খোঁজে বাবার এই নিদারুণ পরিণতি এখন চর্চার বিষয় উপত্যকায়।

Advertisment

দুবছর আগে আগস্ট মাসে সেনা জওয়ান শাকির মনজুর বালপোরা থেকে বাহিবাগে সেনা ছাউনিতে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যান। সোপিয়ানে সেদিন ছিল ইদ। মাঝে পরিবারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরে ফের বিকেল পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন শাকির। সেটাই শেষবার নিজের ছেলেকে দেখেছিলেন মনজুর। তাঁর কথায়, "আমার মনে হয় তারপরই কেউ তাঁকে অপহরণ করে নেয়। শেষবার হয়তো বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল শাকির। কারণ, বাড়ি থেকে বেরনোর আধ ঘণ্টা পর পরিবারকে ফোন করে শাকির বলেছিল, সে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে তারপর ক্যাম্পে যাবে। কোনও অফিসার তাঁর খোঁজ করলে যেন বলা হয়, সে রাস্তায় আছে।"

তারও ঠিক ঘণ্টাখানেক বাদে গ্রাম থেকে ১৬ কিমি দূরে পাশের কুলগাম জেলায় শাকিরের পুড়ে যাওয়া গাড়ি উদ্ধার হয় একটা মাঠের মধ্যে। সাতদিন পর বাড়ি থেকে তিন কিমি দূরে শাকিরের পোশাক পাওয়া যায়। রক্ত-কাদা মাখা সেই খাকি প্যান্ট হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনজুর। পোড়া গাড়ির ভিতর শাকিরের জামার অংশও পাওয়া গিয়েছিল। পরিবারের অনুমান, অপহরণের সময় ধস্তাধস্তিতে হয়তো জামা ছিঁড়ে যায় শাকিরের।

এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা অডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হয়, "যেভাবে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন জঙ্গিদের খতম করার পর তাদের দেহ পরিবারকে দেওয়া হয় না, ঠিক সেভাবেই নিহত সেনার দেহ পরিবারকে দেওয়া হবে না।" এরপরই শাকিরের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা ছড়ায়। খাতায় কলমে এখনও নিখোঁজ শাকির। সোপিয়ানের পুলিশ সুপার অমৃতপাল সিং জানিয়েছেন, "ঘটনার তদন্ত চলছে। শাকিরের দেহ খুঁজে বের করার সবরকম চেষ্টা চলছে।"

ছেলেকে খুন করা হয়েছে একথা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন মনজুর। তিনি বলেছেন, "একজন মহিলা প্রত্যক্ষদর্শী চারজনকে দেখেছিলেন শাকিরকে মারছে। সেটা আর জামায় রক্তের দাগ থেকে আমার মনে হয় না শাকির প্রাণে বাঁচতে পেরেছে।" এই কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে মনজুরের। সেই দিনের পর থেকে রোজ মৃত ছেলের চিৎকার কানে ভেসে আসে মনজুরের। তারপর কোদাল-বেলচা হাতে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। প্রথম প্রথম স্থানীয়রাও শাকিরের দেহ খুঁজতে সাহায্যের হাত বাড়াতেন। কিন্তু বিরাট গাছে ঢাকা এলাকায় মাটি খুঁড়তে আর কেউ এগিয়ে আসে না।

প্রত্যেক দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাটি খুঁড়ে ক্লান্ত হয়ে যান মনজুর। কিন্তু থামতে মন চায় না। তারপর বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। এতদিন পাশের তিন জেলার বিভিন্ন গ্রামে মাটি খুঁড়েছেন মনজুর। তাঁর একটাই কথা, "আমি শুধু আমার ছেলের দেহটা ভালভাবে দাফন করতে চাই। তাতেই আমি এটুকু নিশ্চিত হব, আমার ছেলে শান্তিতে মাটিতে শুয়ে আছে।" বলতে বলতে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন সন্তানহারা মনজুর।

jammu and kashmir
Advertisment