তাদের "নিজেদের এলাকায়" হাসপাতাল এবং ইস্কুলের দাবী জানাল ছত্তিসগড়ের বিজাপুর জেলার পামেড় এরিয়া কমিটির মাওবাদীরা। এছাড়াও তারা চায় এলাকায় ডাক্তার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ। সপ্তাহখানেক আগে লেখা, কিন্তু বুধবার সকালে প্রকাশিত, এক ক্রোড়পত্রে ১৭-দফা দাবীর প্রথমটি হলো: "হামারে ক্ষেত্র মে আশ্রম, স্কুল, আসপাতাল খোলা যায়ে। সরকারি গুরুজিয়োঁ, ডক্টরোঁ কি নিয়ুক্তি কিয়া যায়ে (আমাদের এলাকায় আশ্রম, ইস্কুল, হাসপাতাল খোলা হবে। সরকারি শিক্ষক, ডাক্তার নিয়োগ করা হবে)।" ওই অঞ্চলের কিছু পদস্থ পুলিশ আধিকারিক এবং সরকারি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন এই ক্রোড়পত্র প্রকাশের কথা। কিন্তু এক পুলিশকর্তা এও জানিয়েছেন যে আপাতত ক্রোড়পত্রটিকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন তাঁরা। "এভাবে স্থানীয়দের দলে টানার চেষ্টা করতে পারে ওরা," বলেন তিনি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/01/maoist-pamphlet-1-1.jpeg)
অবশিষ্ট ১৬টি দফায় রয়েছে বেকারদের কর্ম সংস্থানের কথা, কৃষি ঋণ মকুব এবং পেনশনের কথা, এলাকার ইস্কুলগুলি আবার খোলার কথা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাইনে বাড়ানোর কথা, এবং সমস্ত ইস্কুল ও হাসপাতালে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা। সিপিআই (মাওইস্ট)-এর পামেড় এরিয়া কমিটির এই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের তরফ থেকে পুলিশি চিরুনি তল্লাশি বন্ধ করা হোক, "উন্নয়নের নামে বসানো" পুলিশ ক্যাম্প সরানো হোক, এবং বিএসএফ-এর বাস্তার ব্যাটালিয়নের মতো শুধুমাত্র উপজাতিদের নিয়ে গঠিত ব্যাটালিয়ন সিআরপিএফ-এও চালু করা হোক।
বিজাপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি গণেশ মিশ্র এই অঞ্চলে সাংবাদিকতা করছেন আজ কুড়ি বছর। তাঁর অভিজ্ঞতায় এই ধরনের কোনও দাবীর কথা তিনি শোনেন নি বলে জানাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, "কোনও মাওবাদী ক্রোড়পত্রে স্কুল, হাসপাতাল বানানোর কথা, বা ডাক্তার আর টিচার নিয়োগের কথা, আমি কখনো দেখিনি। ওরা যে এসব চাইছে সেটা ভালো, কিন্তু এভাবে মানুষের আস্থা ফিরে পেতে চায় ওরা, এমনও হতে পারে।"
দাবী ১১-১৭
ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (অ্যান্টি নক্সাল অপারেশনস) পি সুন্দর রাজ বলেছেন, "সরকার এবং পুলিশ ঠিক এভাবেই এলাকার উন্নতিসাধন করতে চায়। কিন্তু এটা (দাবী সহ ক্রোড়পত্র প্রকাশ) দেখে মনে হচ্ছে মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা, যে ফাঁদে মানুষ পা দেবেন না। মাওবাদীদের উন্নয়ন-বিরোধী এবং হিংসাত্মক মানসিকতা যথেষ্ট পরিচিত। ওরা যা প্রচার করছে তা যদি সত্যিই বিশ্বাস করে, কেন এখনো সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা, বা বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগানোর মতো কাজ করছে? বছরের পর বছর স্কুল বিল্ডিংও টার্গেট করে এসেছে ওরা। ওদের কথা আর কাজের মধ্যে ফারাক রয়েই গেছে।"
পুলিশের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে তাঁরা এই ঘটনায় "কৌতূহল" বোধ করছেন, এবং এই বিশেষ পদক্ষেপের কারণ খতিয়ে দেখছেন। এক পুলিশকর্তার কথায়, "প্রথমে এই প্যাম্ফলেটটা আসল কী না তাই নিয়ে সন্দেহ ছিল। গত এক বছরে সরকার অনেক কাজ করেছে এই এলাকায়, বিশেষ করে পামেড়ে। এরিয়া কমিটির মুঠি ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে। আগে এখানে ক্যাম্পে রসদ সরবরাহ করতে হতো প্লেনে করে, কিন্তু এখন আমরা রাস্তা বানিয়েছি পাশেই তেলেঙ্গানার মধ্যে দিয়ে। এটা হতেই পারে যে এসব বলে ওরা মানুষের কাছে নিজেদের জনদরদী প্রমাণ করতে চাইছে, বা বিভিন্নরকম নির্মাণ কাজ শুরু হলে এলাকায় যা টাকা আসবে, তার ওপর নজর রয়েছে। স্কুল বা হাসপাতাল শান্তিমতো চলতে দিলে তো খুবই ভালো কথা।"