একরত্তি শিশু বাটি হাতে বারবার খিচুড়ি চাইছিল। এই অপরাধে তার গায়ে ঢেলে দেওয়া হল গরম খিচুড়ি!
মুর্শিদাবাদ জেলার খিদিরপুরের পশ্চিমপাড়ার ঘটনা। বছর ছাব্বিশের মিনু বিবি তাঁর তিন বছরের ছেলে আফ্রিদিকে ঘণ্টাখানেকের জন্য রেখে গিয়েছিলেন এলাকার অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় সরকারের শিশু উন্নয়ন সেবা যোজনায় ছয় বছরের কমবয়সী শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে খিচুরি আর ডিম দেওয়া হয়। সেই খাবারের জন্যই গত মাস দুয়েক যাবত প্রতিদিন মিনু একরত্তি আফ্রিদিকে রেখে যেতেন ওই কেন্দ্রে। কিন্তু তারপর যা হল, তা কল্পনাও করতে পারেননি মা!
অভিযোগ, গত ২৪মে আফ্রিদি বাড়ি থেকে নিয়ে আসা বাটি হাতে নিয়ে মায়ের জন্য জন্য অঙ্গনওয়ারির কর্মী সাহেরি বাওয়ার কাছে খিচুরি চাইতে যায়। একাধিকবার চাওয়ার পরেও উত্তর মেলে না। শিশুটি ক্রমাগত খিচুড়ি চাইতে থাকলে রেগে যান ওই অঙ্গনওয়ারি কর্মী। এরপর তিনি আফ্রিদির জামা খুলে তাঁর পিঠে ঢেলে দেন গরম খিচুরি। ঘটনার পর ছোট্ট আফ্রিদিকে রঘুনাথগঞ্জের হাসপালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তার পিঠ, পা এবং কোমরের নিম্নাংশে ভয়ঙ্করভাবে পুড়ে গেছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাহেরির নামে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩২১, ৩২৬ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, "ওই অঙ্গনওয়ারি কর্মী রেগে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তদন্ত তার নিজের নিয়মে চলবে।"
আরও পড়ুন আলিগড় শিশু হত্যা মামলায় গ্রেফতার আরও এক
ঘটনাটি বলতে বলতে গলা ধরে আসে মিনুর। তিনি বলেন, " প্রতিদিনের মতো সকাল আটটার সময় আমি আফ্রিদিকে অঙ্গনওয়ারিতে পৌঁছে দিয়ে আসি। ডিম-খিচুরি আনার জন্য ওর হাতে বাটি দিয়ে দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি ও কাঁদতে কাঁদতে আসছে। গায়ে জামা নেই। আমি কোলে তুলে নিতেই ওর পিঠের চামড়ার কিছুটা আমার হাতে উঠে এলো। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই ওকে।"
ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশের উদ্যোগে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়নি। অঙ্গনওয়ারি নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে মিনু বিবি বলেন," আমার ছেলেকে ওখানে রেখে আসি। ওদের দায়িত্ব ছেলেটাকে দেখভাল করার। কিন্তু ওঁরা কোনও দায়িত্বই পালন করেন না। এমনকি কোনও কোনও সময় খাবার দিতেও অস্বীকার করে ওরা।"
ঈদের দিনে আনন্দ করতে পারেনি ছোট্ট আফ্রিদি। ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। দিনমজুর বাবা ছেলের জন্য নতুন জামা কিনে এনেছিলেন। কিন্তু তা পরতে পারেনি ওই একরত্তি শিশু।
Read the full story in English