গত সপ্তাহে তিনি একজন ট্রান্স ম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একমাত্র সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য অসংখ্য সাক্ষাৎকারের অনুরোধ পেয়েছেন। তাঁর সংবাদ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। LGBTQIA+আইডেন্টিটি সম্পর্কে অপ্রশিক্ষিত টেলিভিশন অ্যাঙ্করদের কার্যত তিনি রীতিমতো শিক্ষিত করেছেন। কিন্তু, কখনও কোনও প্রশ্নে মেজাজ হারাননি।
যাইহোক, তারমধ্যেই তিনি একটা জিনিস বেশ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন। তা হল, দায়সারাহীন ভাবে তাঁর লিঙ্গ পরিচয় সম্পর্কে দায়সারা মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিলান্স এই অডিও ভিসুয়াল শিল্পী বলেছেন, 'এমন একটি জৈবিক লিঙ্গের পরিচয় বহন করা খুবই বেদনাদায়ক, যা আমার প্রকৃত লিঙ্গ পরিচয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত। যা আমি মানসিক এবং আবেগগতভাবে অনুভব করি। একজন মহিলার নাম বহন করা, লিঙ্গ বিভাগে মহিলা লেখা, আমার নামের সামনে 'মিস বা মিসেস' শিরোনাম দেখার মত আরও অনেক কিছুই করতে আমার খুব কষ্ট হয়। আমার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যথা আরও গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।'
হামেশাই ভুল লিঙ্গ এবং জন্মের লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে একজন ট্রান্সকে ডাকা হয়। এতে যাঁদের ট্রান্স আইডেন্টিটি আছে, তাঁরা অবদমিত বোধ করে। সুচেতন এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এটা আমাদের জন্য খুব বেদনাদায়ক একটা বিষয় এবং আমাকে বিষয়টি খুব বিরক্তও করে, তা হল কিছু লোক LGBTQIA+ সম্পর্কে জানার ভান করেন। অথচ, তাঁরা ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ এবং লেসবিয়ানদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বুঝতেই পারেন না।'
সুচেতন বলেন, 'সমাজকে উপলব্ধি করার জন্য গণসচেতনতাই মূল চাবিকাঠি। এখানে কিছু অদ্ভুত নয়। কাউকে অদ্ভুত বলাও উচিত নয়। সমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে LGBTQIA+সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তি যে কোনও বিষমকামী ব্যক্তির মতোই স্বাভাবিক এবং চরম স্বাভাবিক।'
আরও পড়ুন- রান্নাঘরে খুন্তি নাড়ছেন মান্না দে, ‘রাঁধুনি’ শিল্পীকে দেখেই গান বেঁধে ফেললেন সুরকার! তারপর?
LGBTQIA+ ইভেন্টে ৪১-বছর-বয়সির প্রকাশ্যে আসার সিদ্ধান্ত বাংলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। অনেকেই সুচেতনকে সমর্থন করেছেন। আবার কেউ কেউ এটি করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংবেদনশীলতার বিরল প্রদর্শন করেছে। সঙ্গে সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন যে সুচেতনের 'ইচ্ছেমত জীবনযাপন করার অধিকার আছে।' স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই) পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের রাজ্য সম্পাদক শ্রীজন ভট্টাচার্য বলেছেন, 'প্রান্তিক লিঙ্গদের জন্য সমান অধিকার দাবি করা বামপন্থী মতাদর্শের অঙ্গ।'