বছর ১৩ আগের কথা। নন্দীগ্রাম তখনও সংবাদ শিরোনামে। নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। ব্যাকফুটে বামেরা। সেই সময়ই নন্দীগ্রামের তৎকালীন সিপিআই বিধায়ক শেখ মহম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। চারদিকে নিন্দার ঝড়। ইস্তফা দেন ইলিয়াস। পরে অবশ্য তদন্তের প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু ইলিয়াস আর সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরেননি। বদলে সিপিআই-তে যোগ দেন নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কপুত্র শেখ সাদ্দাম হোসেন। বাবার প্রতি অন্যায় অভিযোগের প্রতিশোধ নিতে গত কয়েকবছর দলের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে সাদ্দাম। কিন্তু, এবার তাঁর বদলে ওই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী করেছে সিপিএমের যুব মুখ লড়াকু নেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়কে। আর এতেই গোঁসা হয়েছে ইলিয়াস পুত্রের। দল টিকিট না দেওয়ায় নন্দীগ্রাম থেকে নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট ময়দানে বছর ২৮-য়ের শেখ সাদ্দাম হোসেন।
হেভিওয়েট কেন্দ্র ন্দীগ্রামে গত কয়েকদিনে প্রচার ঘিরে সরগরম। কিন্তু 'হিরে' চিহ্ন নিয়ে প্রাচারে একবারের জন্যও দেখা মেলেনি শেখ সাদ্দামের। কোথায় তিনি? না, প্রচারে নেই সাদ্দাম। শাসক দলের হুমকিতেই নাকি এলাকা ছাড়া এই নির্দল প্রার্থী। শেখ সাদ্দামের মা তথা নন্দীগ্রামের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়কের স্ত্রী সাহিদা খাতুনের কথায়, 'ঘুষকাণ্ডের অভিযোগের পর আমার স্বামী আর বাড়ির বাইরে বেরোন না। তবে, মানসিকভাবে রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। ছেলে সাদ্দাম বাবার প্রতি ওঠা অন্যায় অভিযোগের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পথে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলো। ও সিপিআইতে যোগ দেয়। কিন্তু পার্টি সাদ্দামকে টিকিট দেয়নি। তাই একলা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।'
ছেলের বাড়িতে না থাকা প্রসঙ্গে সাহিদা ও তাঁর প্রতিবেশীরা বলেন, 'নির্দল প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জনা করতেই তৃণমূল হুমকি দিতে শুকরু করেছিল। এমনকী প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও শাসিয়েছে। তাই গত একসপ্তাহের বেশি সময় থেকেই সে আর বাড়িতে ফেরেনি। কোনও যোগাযোগও করেনি।'
প্রার্থী হয়ে কার ভোট কাটবেন শেখ সাদ্দাম হোসেন? তাই নিয়ে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের হিসাব নিকেশ চলছে। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার অভিযোগ, 'বিজেপির ডামি প্রার্থী সাদ্দাম। বিষয়টি স্পষ্ট হতেই এলাকা ছেড়েছে সে।' যদিও এ অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। তাঁর কথায়, 'আমাদের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এমনীতেই জিতবেন। তাই ডামি প্রার্থী দেওয়ার কোনও প্রয়োজনন নেই। আমরা জেনেছে যে, তৃণমূলের ভয়েই সাদ্দাম এলাকাছাড়া।'
সিপিআই নেতৃত্ব অবশ্য সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন। সিপিআই রাজ্য নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'সাদ্দামের উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্র ছিল না। নন্দীগ্রামে আমরা সিপিএম প্রার্থীকেই সমর্থন করছি।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন