সুখবীর সিং সান্ধু এবং জ্ঞানেশ কুমার নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, 'কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার কোন মতামত জানতে চাওয়া হয়নি। স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার জন্য ডাকা হয়েছিল আমাকে'। তবে কমিশনার নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এদিনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে অধীর দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধুকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করেছে। প্রাক্তন কমিশনার অরুণ গোয়েলের তড়িঘড়ি পদত্যাগের পর নির্বাচন কমিশনারের পদটি শূন্য হয়ে যায়। লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি, নির্বাচন কমিশনার নিজেই পদত্যাগ করায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে। পরবর্তীকালে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব কমিটি দুই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধুকে কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত করেছে।
এই কমিটিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ, অর্জুনরাম মেঘওয়াল এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী। অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান, 'এই বৈঠকে ৬টি নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে'। কমিটিতে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই তাদের মর্জি অনুসারেই কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে'। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, 'গতরাতে আমাকে ২১২ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়। রাতারাতি সেই তালিকা ও তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আমি আগেই তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই তালিকা আমাকে আগে দেওয়া হয়নি'।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আজ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা এবং কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর অধীর রঞ্জন চৌধুরী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং অভিযোগ করেন যে সরকার ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন কমিশনারদের নাম ঠিক করেছে।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন যে 'সুখবীর সান্ধু এবং দানেশ কুমারের নাম ইতিমধ্যেই মনোনীত হয়েছে। শিগগিরই নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে'। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পান্ডের অবসর এবং সম্প্রতি অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের কারণে নির্বাচন কমিশনে দুই নির্বাচন কমিশনারের পদ শূন্য রয়েছে। সেই পদ পূরণে আজ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'সরকার যাকে চাইবে, তিনিই নির্বাচন কমিশনার হবেন।' অধীর রঞ্জন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিটিতে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সরকার তার পছন্দের নাম নির্বাচন করতে পারে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এত বড় পদে নিয়োগ এইভাবে করাটা একেবারেই উচিত নয়। মিটিংয়ের ১০ মিনিট আগে আমাকে ছয়টি নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, এত অল্প সময়ের মধ্যে আমি কী বলব?'
নতুন নিয়ম অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা এবং একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আইন মন্ত্রকের প্রস্তাবিত পাঁচটি নামের মধ্যে যেকোনো দুটি নাম নির্বাচন করবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারই রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন আইনকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। পুরনো নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। এবিষয়ে শীঘ্রই আবেদনের শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে।