Advertisment

Katchatheevu issue: 'ভারত যদি সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে'...! কাচাথিভু দ্বীপ নিয়ে এবার মুখ খুললেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত

'পাকিস্তান যদি গোয়ার কাছে সমুদ্র দখলের প্রস্তাব দেয়, ভারত কি সহ্য করবে?': প্রবীণ লঙ্কান কর্মকর্তা অস্টিন ফার্নান্দো

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lankan ex-envoy on Katchatheevu: Breach of sovereignty if India crosses sea boundary

ভারতে শ্রীলঙ্কার সাবেক হাইকমিশনার অস্টিন ফার্নান্দো

অর্ধশতাব্দী আগে ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির গল্প। আর, তাকে হাতিয়ার করে ভোটের মুখে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক পারদ তুঙ্গে তুলেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, কাচাথিভু দ্বীপকে শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়ে কংগ্রেস আর ডিএমকে মিলে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। কারণ, ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়ায় ভারতের কোনও লাভ তো হয়ইনি। উলটে সামরিক ক্ষেত্র, মৎসচাষে ক্ষতি হয়েছে দেশের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এই ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘বোকার মত’ দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisment

যদিও নির্বাচনের ঠিক আগে মোদীর কয়েকদশকের আগের তোলা একটি ঘটনা প্রসঙ্গে এবার মুখ খুলেছেন, শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত। কী বলেছেন অস্টিন ফার্নান্দো? তিনি বলেছেন, 'ভোটের লক্ষ্যে এই ধরণের ইস্যুকে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য তোলা হচ্ছে। কিন্তু ভোট মিটে গেলে এই বিষয়টি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে'।

বুধবার কলম্বো থেকে ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তিনি বলেন, 'ভারত সরকার যদি শ্রীলঙ্কার সামুদ্রিক আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে তবে তা "সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন" হিসাবেই বিবেচনা করা হবে'। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "পাকিস্তান যদি গোয়ার কাছে সমুদ্র দখলের চেষ্টা করে, ভারত কি তা সহ্য করবে? অথবা যদি বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এরকম কিছু করে, তাহলে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী হবে?" ফার্নান্দো, ২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত ভারতে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ফার্নান্দো বলেছেন, "তুলনামূলকভাবে তামিলনাড়ুতে বিজেপির খুব বেশি প্রভাব নেই। তাই ভোটের আগে বিষয়টিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বিজেপি"।

পাশাপাশি তিনি মনে করে দিয়েছেন, বিজেপি সরকার যদি ফের ক্ষমতায় আসে তাহলে 'নির্বাচনের পরে সরকারের পক্ষে সেই ইস্যু থেকে বের হয়ে আসাটা কঠিন হবে'। তিনি এও বলেছেন, আমাদের দেশের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী আবহে আমার মনে হয় এই বিষয়টি তোলা মোটেই উচিত হয়নি। তবে আমি বুঝতে পারছি, "বিজেপির জন্য এটা সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।” শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এখানে বিরোধীরা ভারতীয় বিনিয়োগের সমালোচনা করে। বিজেপির কাচাথিভু ইস্যু সেই সমালোচনাকে আরও উসকে দেবে, আরেকটি কঠিন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করবে।"

কাচাথিভু দ্বীপ
কাচাথিভু হল শ্রীলঙ্কার জলসীমার মধ্যে ২৮৫ একরের একটি দ্বীপ। যা তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের উত্তর-পূর্বে ভারতীয় উপকূল থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শ্রীলঙ্কার ডেলফট দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই দ্বীপ অনুর্বর। ১৪ শতকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জেরে দ্বীপটি তৈরি হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ১.৬ কিলোমিটার। চওড়া ৩০০ মিটার। দ্বীপটি শেষ পর্যন্ত তামিলনাড়ুর রামানাথপুরমের রামানাদ রাজাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই দ্বীপে ১২০ বছরের পুরোনো সেন্ট অ্যান্থনির চার্চ আছে। যে চার্চে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা, উভয় দেশ থেকেই ভক্তরা ভিড় করেন।

১৯৭৪ সালে যা হয়েছিল
শ্রীলঙ্কা ১৯২১ সাল থেকে কাচাথিভু দ্বীপের ওপর তাদের অধিকার দাবি করে আসছিল। ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জমানায় ভারত এবং শ্রীলঙ্কা দুটি চুক্তি করে। ২৬ জুন কলম্বোতে এবং ২৮ জুন নয়াদিল্লিতে চুক্তি দুটো হয়। যার জেরে দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে চলে যায়। কিন্তু, সেই চুক্তিতে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের কাচাথিভু দ্বীপে বিশ্রাম নেওয়া, মাছ ধরার জাল শুকোনো এবং সেন্ট অ্যান্টনি উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য দ্বীপে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ‘ভারতীয় মৎস্যজীবী এবং তীর্থযাত্রীরা কাচাথিভুতে বিনা ভিসায়, বিনা ভ্রমণের নথিতেই প্রবেশ করতে পারবেন।’ তবে, সেই চুক্তিতে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের কাচাথিভুতে মাছ ধরার অধিকার দেওয়া হয়নি।

ডিএমকের ভূমিকা
আরটিআই আইন, ২০০৫-এর সাহায্যে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী তামিলনাড়ুর বিজেপির প্রধান কে আন্নামালাইয়ের দাবি, এম করুণানিধির নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার সেই সময় নীরবে কেন্দ্রের চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। দ্বীপটি হস্তান্তরের একমাস আগে চেন্নাইয়ের ফোর্ট সেন্ট জর্জে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী কেওয়াল সিং ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মধ্যে বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আন্নামালাইয়ের দাবি, করুণানিধি ‘এই (দ্বীপ হস্তান্তরের) সিদ্ধান্তের পক্ষে’ ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘সিদ্ধান্তটি দুই বছর স্থগিত করা’ সম্ভব কি না। যদিও তামিলনাড়ু বিধানসভার নথি দেখায়, মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধি ১৯৭৪ সালে কাচাথিভু চুক্তির বিরুদ্ধে বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, বিরোধী দল এআইএডিএমকেই রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়ায়নি।

১৯৭৬ সালের ঘটনা
১৯৭৫ সালের জুনে, ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন। করুণানিধির সরকারকে ১৮৭৬ সালের জানুয়ারিতে বরখাস্ত করা হয়। তারপরে, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার বিদেশ সচিবদের মধ্যে বেশ কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদান হয়। যার জেরে, কাচাথিভু ইস্যুতে একগুচ্ছ আদেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, কন্যাকুমারীর কাছে ‘ওয়েজ ব্যাংক’ নামে একটি সামুদ্রিক অঞ্চলের ওপর ভারতের সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাছ যে জায়গাগুলোয় পাওয়া যায়, তার মধ্যে ‘ওয়েজ ব্যাংক’ অন্যতম। জায়গাটি কাচাথিভুর চেয়েও কৌশলগতভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ১৯৭৬ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার জাহাজ এবং মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়।

আরও পড়ুন- Gourav Vallabh resigns: ‘হিন্দু হয়ে সনাতন বিরোধী স্লোগান দিতে পারব না’…! দলকে নিশানা, কংগ্রেস ছাড়লেন হেভিওয়েট নেতা

loksabha election 2024
Advertisment