মোদীর নাম করে সরকারি টাকায় ফূর্তি! পুলিশের জালে জালিয়াত। মোদীর নাম করে সরকারি টাকায় ফূর্তি! Z+ নিরাপত্তা, বুলেটপ্রুফ গাড়ি, চালচলন থেকে পোশাক-আশাক সবেতেই রাজকীয় ব্যপার। পিএমও আধিকারিক পরিচয়ে জালিয়াতকে গ্রেফতার করেছে কাশ্মীর পুলিশ। এখন প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে জম্মু ও কাশ্মীরে মত সুরক্ষিত অঞ্চলে নিজের জাল বিস্তার করে রাজার হালে ছিলেন কিরন প্যাটেল?
জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন কিরন প্যাটেল। তার স্ত্রী মালিনী প্যাটেলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার স্বামী কখনও কোন অন্যায় করতে পারে না। সে পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি ডাক্তার। তিনি জম্মু-কাশ্মীরে গিয়েছিলেন উন্নয়নমূলক কাজে। যেহেতু তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার, এটি তার কাজের একটি অংশ। তাতে কি সমস্যা? সে কারুর প্রতি কোন অন্যায় করেনি এবং করতেও পারে না”..
পকেটে এক হাত, স্যুট-বুট, চোখে কালো চশমা! গুজরাটের বাসিন্দা কিরণ প্যাটেল নিজেকে পিএমও- আধিকারিক হিসাবেই সকলের সামনে মেলে ধরতে বড্ড ভালবাসতেন। জেড প্লাস নিরাপত্তা সঙ্গে নিয়ে গর্ব করে জম্মু ও কাশ্মীর সহ তামাম দেশ ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সামনে ও পেছনে থাকত নিরাপত্তার কনভয়। একটি বেসরকারি টিভি নিউজ চ্যানেল দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিরণ পাটলের স্ত্রী মালিনী স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ‘আপেল বাগানের ক্রেতাদের সাথে দেখা করতে দক্ষিণ কাশ্মীরে গিয়েছিলেন’।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ গত ৩রা মার্চ তাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তাকে শ্রীনগর আদালতে হাজির করার সময় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পিএমও দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়েও রেহাই মিলল না। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন মোদীরাজ্যেরই এক ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে খবর গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তি পিএমও আধিকারিক পরিচয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সম্প্রতি তিনি তিনি নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর শ্রীনগরের লাল চকে পৌঁছান। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচ তারকা হোটেলে পিএমও আধিকারিক পরিচয়েই ছিলেন। জেড প্লাস নিরাপত্তা সহ বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ঘোরাফেরা করতেন তিনি।
জানা গিয়েছে, কিরণ প্যাটেল নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিক পরিচয় দিতেন। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীর সফর করেন। তার এই সফরের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল পোস্টে, তাকে বুদগামের দুধপাথরিতে বরফের উপর হাঁটতে দেখা যায়। এছাড়াও তাকে শ্রীনগর ক্লক টাওয়ার এবং উরিতে এলওসি-র কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পোজ দিতে দেখা যায়। পাশাপাশি তিনি কাশ্মীর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন। পরে সন্দেহ হওয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশকে তার সম্পর্কে সতর্ক করে। এরপর তাকে শ্রীনগরের হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ধৃতের বিরুদ্ধে IPC-এর 419, 420, 467, 468 এবং 471 এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে । জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এদিকে যথাসময়ে চিহ্নিত করতে না পারায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দুই অফিসারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গিয়েছে। গুজরাট পুলিশের একটি দলও তদন্তে চালাচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশ আরও জানিয়েছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের মধ্যে তিন থেকে পাঁচ দিনের চারটি সফর করেন তিনি। শ্রীনগরের পাশাপাশি জম্মুতেও এক ডজনেরও বেশি আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
কিরণ প্যাটেল যিনি নিজেকে পিএমও-এর একজন শীর্ষ আধিকারিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার হন, শ্রীনগরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) এর নির্দেশ অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গুজরাট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। গুজরাট পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) আহমেদাবাদ থেকে কিরণ প্যাটেলকে হেফাজতে নিতে কাশ্মীরে এসে পৌঁছান।
এ বিষয়ে আধিকারিক জানিয়েছেন, সিজেএম শ্রীনগর বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) তাকে গুজরাট পুলিশের হাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন, তারপরে জেল কর্তৃপক্ষ কিরণ প্যাটেলের হেফাজত গুজরাট পুলিশ দলের কাছে হস্তান্তর করে। গুজরাট পুলিশের একটি দল কিরন প্যাটেলকে রাজ্যে যাচ্ছেন। এর আগে, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ ডিজিপি দিলবাগ সিং বলেছিলেন যে প্যাটেলের হেফাজতের বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ গুজরাট পুলিশকে সহযোগিতা করবে। তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটে প্যাটেলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তিনটি মামলা রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আরএসএসকর্মী ত্রিলোক সিং চৌহান এবং বাসির উল হক চৌধুরীর ভূমিকা, ২০১৫ ব্যাচের IAS অফিসার, যিনি পুলওয়ামার ডেপুটি কমিশনার।
এছাড়াও, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার গত ২৯ মার্চ কিরণ প্যাটেলের কাশ্মীর সফর এবং তার সফরের সময় করা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সরকারের আদেশ অনুসারে, কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার, বিজয় কুমার বিধুরীকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তদন্ত নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।