একেই বলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! বিপর্যয় যেন কাটছেই না তুরস্কের। সোমবার সিরিয়া সীমান্তের কাছে ফের জোরাল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। দুসপ্তাহ আগেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে মৃত্যুমিছিল দেখেছে এই দেশ। অন্তত ৪৭ হাজার মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মাথার ছাদ হারিয়েছেন। তার মধ্যেই ফের ভূমিকম্প।
সোমবার কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৪। দক্ষিণ তুর্কি শহর আন্তাক্যার কাছে এর কেন্দ্র ছিল। কম্পন সিরিয়া, মিশর এবং লেবাননেও অনুভূত হয়েছে। ভূগর্ভে ১০ কিমি পর্যন্ত এর কম্পনের মাত্রা অনুভূত হয়েছে। হাতায় শহরের মেয়র লুতফু সাভাস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, সোমবারের ভূমিকম্পের জেরে বেশ কিছু জায়গায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার ঘটনা তিনি জানতে পারেন। অন্তত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম হয়েছেন ২০০ জনের বেশি।
সামানদাগ শহরে দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী খবর পায়, একজনের মৃত্যু হয়েছে বাড়ি ভেঙে পড়ে গিয়ে। কিন্তু মৃত্যু বেশি হয়নি কারণ আগের ভূমিকম্পের জেরে এমনিতেই বহু মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। বাড়িঘর ভাঙা আগে থেকেই। তার মধ্যে আবার ভূমিকম্পে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুনা আল ওমার জানিয়েছেন, তিনি মধ্য আন্তাক্যার পার্কে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ছিলেন। সেই সময় পায়ের তলার মাটি কাঁপতে শুরু করে। তিনি বলেন, আমি ভাবলাম পৃথিবী দুভাগ হয়ে আমি ভিতরে চলে যাব। কোলে আমার সাত বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ভয়ে কাঁপছিলাম।
আরও পড়ুন ‘কিয়েভ আজও টিকে আছে,’ জেলেনস্কিকে সঙ্গে নিয়ে পুতিনের উদ্দেশ্যে অট্টহাসি বাইডেনের
মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুরস্ক সফরে গিয়ে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন যতদিন লাগুক, উদ্ধারকাজে তুরস্কের পাশে থেকে সাহায্য করবে। আপাতত অস্থায়ী আশ্রয় এবং বাড়িঘর মেরামতে জোর দিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট তায়িপ রিসেপ এরদোগান জানিয়েছেন, প্রায় ২ লক্ষ বাড়ির মেরামতি সম্ভব তুরস্কের ১১টি ভূমিকম্প বিধ্বস্ত প্রদেশে। সেই কাজ পরের মাস থেকে শুরু হবে। মার্কিন সাহায্য বর্তমানে ১৮৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। জানিয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর।
ভূমিকম্পের জেরে বেঁচে যাওয়া আহতদের মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা মহিলা রয়েছেন যাঁদের অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। এঁদের মধ্যে ২ লক্ষ ২৬ হাজার মহিলা তুরস্কের এবং ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিরিয়ার বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে ৩৮,৮০০ মহিলার পরের মাসেই সন্তান প্রসবের সময়। এঁরা বর্তমানে তাঁবুতে আশ্রয়ে রয়েছেন। পরিশুদ্ধ পানীয় জল-খাবারের অভাব রয়েছে, তার মধ্যে প্রচণ্ড ঠান্ডায় তাঁরা কাঁপছেন।