Advertisment

বরিসের মসৃণ রাজনৈতিক কেরিয়ারে ছন্দপতন, কোথায় বাধল গোল? দেখুন একনজরে

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মীদের বিরুদ্ধেই ওঠে লকডাউন ভাঙার অভিযোগ। পাশাপাশি, দলের একজন প্রবীণ জনপ্রতিনিধির যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও ওঠে জনসনের বিরুদ্ধে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
borris_joshson_1

লন্ডন অলিম্পিক, ২০১২। সেই সময় তিনি ছিলেন লন্ডনের মেয়র। সাফল্যের সঙ্গে যিনি লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনের কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। সেই সময় ক্ষমতায় এলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ বা ' ব্রেক্সিট রূপায়ণ করা হবে'। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বরিস জনসন কনজারভেটিভ পার্টিকে নির্বাচনী সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জনসনের সময় ব্রিটেনে আছড়ে পড়ে করোনা ভাইরাস।

Advertisment

এই অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটেনবাসীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয় জনসনের সরকার। পাশাপাশি, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ ওঠে। এমনকী, করোনা বিধি ভেঙে একসঙ্গে মদ্যপান, পার্টি আয়োজনেরও অভিযোগ ওঠে জনসনের সরকারের বিরুদ্ধে। খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মীদের বিরুদ্ধেই ওঠে লকডাউন ভাঙার অভিযোগ। পাশাপাশি, দলের একজন প্রবীণ জনপ্রতিনিধির যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও ওঠে জনসনের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন- ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা জনসনের, তবে কাজ চালাবেন আরও কিছু দিন

জনসনের রাজনৈতিক জীবনকে একনজরে দেখে নেওয়া যাক:-

(২০০১-২০০৮): হাউস অফ কমন্সে হেনলির জনপ্রতিনিধি।

(২০০৮-২০১৬): লন্ডনের মেয়র হিসেবে ২০১২ সালে অলিম্পিকের আয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে বের করে আনার পক্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কনজারভেটিভ পার্টির ডেভিড ক্যামেরনের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার। ভোটাররা ব্রেক্সিট সমর্থন করায় ২০১৬ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ক্যামেরন।

(২০১৬-২০১৮): ক্যামেরনের উত্তরসূরি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর জমানায় বিদেশসচিব। ব্রেক্সিট নিয়ে থেরেসা মে-এর নরম নীতির কারণে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে দলের কট্টরপন্থীদের নেতা হয়ে বসেন। যার চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ২০১৯ সালের ৭ জুন কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন থেরেসা মে।

(২০১৯, ২৩ জুলাই): কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হন জনসন। পরদিন থেকেই দায়িত্ব নেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর। তবে, তাঁর সরকার ছিল সংখ্যালঘু। যাকে বিল পাশের জন্য উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সাহায্য নিতে হত। এই সময় জনসন জানিয়ে দেন, ৩১ অক্টোবর ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়বে।

(২০১৯, ২৮ আগস্ট): জনসন জানিয়ে দেন যে তিনি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পার্লামেন্ট বন্ধ রাখবেন। ব্রেক্সিট ব্যর্থ করার জন্য বিরোধীরা যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁদের আরও কম সময় দেবেন।

(২০১৯, ৩ সেপ্টেম্বর): ২১ জন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রতিনিধি জনসনের নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ব্রেক্সিট নিয়ে আরও আলোচনার প্রস্তাবকে সমর্থন করে। যার জেরে বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

(২০১৯, ২৪ সেপ্টেম্বর): ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় যে পার্লামেন্ট বন্ধ রাখা বেআইনি।

(২০১৯, ১৯ অক্টোবর): ব্রেক্সিটের নতুন সময়সীমা ঠিক হয় ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি।

(২০১৯, ৬ নভেম্বর): পার্লামেন্ট মুলতুবি করে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোটের দিন স্থির হয়।

(২০১৯, ১২ ডিসেম্বর): নির্বাচনে জয়ী হন জনসন। মার্গারেট থ্যাচারের পর তিনিই হয়ে ওঠেন নির্বাচনী ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল কনজারভেটিভ নেতা।

(২০২০, ২৩ জানুয়ারি): ব্রেক্সিট চুক্তি আইনে পরিণত হয়। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট তা অনুমোদন করে। ছয় দিন পর ইউরোপীর পার্লামেন্ট সেই চুক্তি অনুমোদন করে।

(২০২০, ২৩ মার্চ): করোনার মুখোমুখি হয় ব্রিটেন। ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল, জনসন হাসপাতালে ভর্তি হন। ১২ এপ্রিল তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

(২০২১, ৩০ নভেম্বর): অভিযোগ ওঠে সরকারি আধিকারিকরা ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে কোভিডবিধি ভঙ্গ করেছে। সরকারি অফিসেই পার্টি করেছেন।

(২০২১, ৮ ডিসেম্বর): প্রথমে অস্বীকার করলেও জনসন এই 'পার্টিগেট' কেলেঙ্কারিতে তদন্তের নির্দেশ দেন।

(২০২২, ২৩ ফেব্রুয়ারি): জনসনের দীর্ঘদিনের সঙ্গী মুনিরা মির্জা-সহ আরও তিন শীর্ষ কর্তা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাজ ছাড়তে বাধ্য হন।

(২০২২, ১২ এপ্রিল): লকডাউনে পার্টিতে যোগ দেওয়ায় জনসনকেও ৬৩ ডলার জরিমানা দিতে হয়।

(২০২২, ২২ মে): পার্টিগেট তদন্তে জানা যায়, ১৬বার জনসনের বাড়ি, অফিস এবং অন্যান্য কার্যালয়ে পার্টি হয়ে লকডাউন ভেঙে।

(২০২২, ৬ জুন): অনাস্থা ভোটে কোনওমতে জয়ী হন জনসন। কিন্তু, দেখা যায়, দলেরই একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

(২০২২, ২৪ জুন): জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি বিশেষ নির্বাচনে দুটো পুরনো শক্ত ঘাঁটিতে হেরে যায়।

(২০২২, ২৯ জুন): জনসন কি লকডাউন পার্টিতে পার্লামেন্টকে বিপথে চালনা করেছিলেন, সেই প্রশ্ন তোলে পার্লামেন্টের প্রিভিলেজ কমিটি।

(২০২২, ৩০ জুন - ৬ জুলাই): একের পর এক সতীর্থরা জনসনের নেতৃত্বে অনাস্থা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেন। তাঁদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন পদাধিকারীদের পাশাপাশি মন্ত্রীরাও রয়েছেন।

(২০২২, ৭ জুলাই): শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বরিস জনসন।

Read full story in English

Resignation Prime Minister Boris Johnson
Advertisment