ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ১৮৬০, ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড, ১৮৫৮ ও ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২- এই তিনটি আইনের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য আইন আনা হবে। লোকসভায় গতকাল তিনটি বিল পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
পেনাল কোড এখন জাস্টিস কোড, এভিডেন্স অ্যাক্ট হয়ে গেল সাক্ষ্য আইন, দাসত্বের নিদর্শন মুছে ফেলতে আইনে আমুল রদবদল মোদী সরকারের! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হলে, দেশ দাসত্ব থেকে মুক্ত হবে। সমস্ত পুরানো নিদর্শনগুলিকে মুছে ফেলা হবে সেই প্রতিশ্রুতি আমরা পূরণ করতে চলেছি’।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার (১১ আগস্ট ২০২৩) ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রে আমূল বদল এনে তিনটি বিল পেশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যখন আমি এই বিল এনেছি, তখন স্বাধীনতার ‘অমৃত মহোৎসব’ শেষ হতে চলেছে এবং দেশে ‘অমৃত কাল’ শুরু হতে চলেছে’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘আমরা বৃটিশ আমলে প্রণীত তিনটি দণ্ডবিধি এবং ঔপনিবেশিকতার নিদর্শন চিরতরে পরিবর্তনের জন্য সংসদের একটি বিল পেশ করছি। এই তিনটি বিল আমাদের পাঁচটি প্রতিজ্ঞার একটি পূরণ করতে চলেছে’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এই তিনটি বিলের মধ্যে একটি হল ভারতীয় দণ্ডবিধি, একটি হল ফৌজদারি কার্যবিধি, তৃতীয়টি ভারতীয় সাক্ষ্য বিধি৷
তিনটি নতুন বিল পেশ করে অমিত শাহ বলেন, তিনটি আইন পরিবর্তন হলে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এই বিলগুলি 'ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (ভারতীয় দণ্ডবিধি)', 'কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর' এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট এই তিনটি আইনের জায়গা নিতে চলেছে।
কী কী বড় পরিবর্তন?
- নতুন আইপিসিতে ৩৫৬টি ধারা থাকবে, যেখানে আগে এটি মোট ৫১১ টি ধারা ছিল।
- সিআরপিসিতে ৫৩৩ ধারা থাকবে। ১৬০টি ধারা সংশেধন করা হয়েছে, ৯টি নতুন ধারা আনা হয়েছে।
- প্রমাণ সংগ্রহের জন্য লাইভ ভিডিওগ্রাফি করতে হবে।
- যেসব বিভাগে ৭ বছরের বেশি সাজার বিধান রয়েছে সেসব বিভাগে প্রমাণ সংগ্রহ করতে ফরেনসিক দল সেখানে পৌঁছাবে।
- অপরাধ যে কোন এলাকায় ঘটতে পারে কিন্তু দেশের যে কোন প্রান্তে এফআইআর দায়ের করা যেতে পারে।
- ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য ধারাগুলির জন্য একটি ‘সংক্ষিপ্ত বিচার’ হবে। এ কারণে মামলার শুনানি ও সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।
- ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে।
- অভিযোগ গঠনের ৩০ দিনের মধ্যে বিচারককে তার রায় দিতে হবে।
- সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে ১২০ দিনের মধ্যে অনুমতি দিতে হবে।
- মিথা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ক্ষেত্রে আইন আনার প্রস্তাব রয়েছে। অভিযুক্তকে অপরাধের আওতায় আনা হবে। গণধর্ষণের সব ক্ষেত্রেই শাস্তি হবে ২০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ধর্ষণে অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে ন্যূনতম ১০ বছরের সাজার বিধান থাকছে।
- ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হবে।
- রাষ্ট্রদ্রোহ আইন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হচ্ছে।
- এই নতুন আইনে কেউ ভারতের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার চেষ্টা করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। একই সঙ্গে গনপিটুনি এবং নাবালিকাকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড-এর উল্লেখ রয়েছে।
- নয়া বিলে মৃত্যুদণ্ড কেবলমাত্র যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হতে পারে বলেও উল্লেখ রয়েছে এবং শাস্তিদানের প্রথম সাত বছরের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ক্ষমার আওতায় আনা যেতে পারে।
শাহ বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য "ন্যায়বিচার, শাস্তি নয়। প্রস্তাবিত আইনে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ শব্দটি নেই। আমি বলতে চাই সরকার একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে গণতন্ত্র আছে, সবার কথা বলার অধিকার আছে। ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে অমিত শাহ সংসদে ৩টি বিল পেশ করেছেন।
নতুন বিলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাতিল হবে ব্রিটিশ জমানার ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’, বিরাট বদল আসতে চলেছে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায়। ১৯৮০ সালের ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের বদলে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ আনার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর’-এর জায়গায় আসতে চলেছে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’। এই আইন গুলি ব্যাখ্যার মাঝেই দেশ থেকে রাষ্ট্রদোহ আইন তুলে নেওয়ার কথা জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।