Advertisment

'গান্ধীজি ভগত সিংকে বাঁচানোর খুব চেষ্টা করেন নি', বললেন দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা

"ভগত সিং বা অন্য কোনও বিপ্লবীকে মহাত্মা গান্ধী ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন কিনা, তা বলা মুশকিল, কারণ এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই... উনি খুব একটা চেষ্টা করেন নি..."

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
principal economic adviser

মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল

ভগত সিং এবং অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বাঁচানোর যথেষ্ট চেষ্টা করেন নি মহাত্মা গান্ধী, এই অভিযোগ করে ভারত সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল বুধবার বলেছেন, "ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিকল্প ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাহিনির ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ঘটানো হয়েছে"।

Advertisment

গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে 'The Revolutionaries: A Retelling of India’s History' শীর্ষক এক বক্তৃতা দিতে গিয়ে সঞ্জীব বলেন, ওই কাহিনি ভারতের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে ব্রিটিশদের পক্ষেও "অসুবিধাজনক"। তিনি আরও বলেন যে ওই সংগ্রামের কাহিনি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

"ভগত সিং বা অন্য কোনও বিপ্লবীকে মহাত্মা গান্ধী ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন কিনা, তা বলা মুশকিল, কারণ এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই... উনি খুব একটা চেষ্টা করেন নি..." তাঁর ভাষণে বলেন সঞ্জীব।

আরও বিশদে গিয়ে তিনি বলেন, "ওঁর (গান্ধীজির) হিংসাকে উপেক্ষা করতে কোনও অসুবিধা হয় নি। মনে রাখতে হবে, ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর জন্য সেনা নিয়োগে সহযোগিতা করেন উনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যদি ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর জন্য সেনা নিয়োগ করতে উনি ইচ্ছুক থেকে থাকেন, তাহলে ভগত সিং একই কাজ করলে তাঁর আপত্তি হতো কেন? খিলাফত আন্দোলনের পর মালাবার বিদ্রোহ চলাকালীন যে হিংসার ঘটনা ঘটে, সেগুলিকে কম করে দেখানোর চেষ্টা করেন গান্ধীজি। এই বিদ্রোহও কিন্তু কার্যত তাঁরই নেতৃত্বে ঘটে। সুতরাং এই প্রেক্ষিতে বিপ্লবীদের মনে হয়েছিল, ভগত সিং এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের বাঁচানোর যথেষ্ট চেষ্টা করেন নি গান্ধীজি..."

বিপ্লবীরা ভারতে স্বাধীনতা আনলে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী হতো কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জীব বলেন, "এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই। এঁদের মধ্যে অনেকেই অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত ছিলেন, যেমন রাসবিহারী বসু, শ্রী অরবিন্দ বা আরও অনেকে। এটা আসলে এক ধরনের প্রচার... আমার মতে এটা অত্যন্ত অন্যায্য, এমনকি এঁদের (বিপ্লবীদের) কাহিনির ইচ্ছাকৃত বিকৃতি, যাতে ভারতের স্বাধীনতার বিকল্প ইতিহাসকে দমিয়ে রাখা যায়।"

উদাহরণ দিয়ে সঞ্জীব বলেন যে, আইরিশ প্রজাতন্ত্র এমন একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে স্বাধীনতা এসেছিল সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে, কিন্তু তা বলে সেখানে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় নি। "সুতরাং স্বাধীনতার পর ভারত যে সেই পথে হাঁটত, এমন ভাবার কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবী নেতাদেরই হত্যা করা হয়। রাসবিহারী বসু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, আবার অন্যদিকে নিহত হন (রামপ্রসাদ) বিসমিল, ভগত সিং, এবং চন্দ্রশেখর আজাদ। স্বাধীনতার যুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের মূল কাণ্ডারিদের মধ্যে স্বাধীনতা পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন স্রেফ দুজন - শ্রী অরবিন্দ এবং সাভারকর।

স্বাধীনতার পর বিপ্লবীরা নানা রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান চারদিকে। কেউ কংগ্রেসে যোগ দেন, কেউ হিন্দু মহাসভা এবং তার পর আরএসএস-এ আসেন, বলেন সঞ্জীব। তাঁর বক্তব্য, এই বিপ্লবীদের কাহিনি পাঠ্যবই এবং পাঠক্রমে থাকা উচিত। "আমাদের পাঠক্রমে এই কাহিনির ফিরে আসা দরকার... সুখের কথা হলো যে সাধারণ কালচারও সেইদিকেই যাচ্ছে, অতএব আপনারা কিছুদিন আগে অ্যামাজন প্রাইমে দেখেছেন 'ফরগটেন আর্মি'। নেতাজীর কাহিনিও বলা হয়েছে। গত বছর এই প্রথম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (আইএনএ বা আজাদ হিন্দ ফৌজ) যেসব সদস্য আজও আছেন, তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। স্বাধীনতার পর ৭১ বছর লাগল এই ঘটনা ঘটতে... গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় 'বিপ্লবী ভারত' নামে নতুন একটি সংগ্রহশালার কথা ঘোষণা করেন, বিপ্লবীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।"

Mahatma Gandhi
Advertisment