Advertisment

গৌরী লঙ্কেশ-কালবুর্গি হত্যামামলা: সমুদ্র খাঁড়ি থেকে উদ্ধার বন্দুকের ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষা

পানসারে হত্যাকাণ্ডে যে দ্বিতীয় দেশি বন্দুকটি ব্যবহার করা হয়েছিল, ব্যালিস্টিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে তা ব্যবহার করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে ৬৯ বছর বয়সী দাভোলকর হত্যাকাণ্ডেও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Gauri Lankesh

গৌরী লঙ্কেশ ও এম এম কালবুর্গি

২০১৭ সালে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ ও ২০১৫ সালে কন্নড় পণ্ডিত এম এম কালবুর্গির মৃত্যুর ঘটনায় তৈরি কর্নাটক পুলিশের এক বিশেষ তদন্ত দল এখন অপেক্ষায়। সূত্র জানিয়েছে, তাঁরা আরব সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি বন্দুকের ফরেনসিক তদন্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই বন্দুক ওই দুই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা জানতে চান তাঁরা। ২০১৩ সালে মহারাষ্ট্রে যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের সঙ্গে তল্লাশি অপারেশন চালাতে হিয়ে এই বন্দুকটি উদ্ধার হয়।

Advertisment

মুম্বই-নাসিক হাইওয়েতে একটি সমুদ্রখাঁড়ির কাছে এই বন্দুকটি উদ্ধার হয় বলে জানা গিয়েছে। একটি ড্রেজিং সংস্থা ওই বন্দুকটি পায় বলে জানা গিয়েছে। দাভোলকর হত্যাকাণ্ডে একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন শরদ কালাসকর (২৬) জানিয়েছিল ২০১৩ সাল থেকে অতি দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে একাধিক হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চারটি বন্দুক খুলে ফেলে খাঁড়িতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০১৩ সালে খুন হত নরেন্দ্র দাভোলকর। বামপন্থী চিন্তাবিদ গোবিন্দ পানসারে এবং কালবুর্গি খুন হন ২০১৫ সালে। ২০১৭ সালে নিহত হন গৌরী লঙ্কেশ। তদন্তে জানা গিয়েছে এই হত্যাকাণ্ডগুলিতে দুটি নির্দিষ্ট বন্দুক ব্যবহার করেছিল সনাতন সংস্থার মত অতি দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী।

কর্নাটক পুলিশের অফিসাররা সমুদ্রের খাঁড়ি থেকে উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এই বন্দুকই কি দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছিল! বিশেষ তদন্ত দলের এক সূত্র জানিয়েছে, সিবিআইয়ের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত বিবরণ পেতে হবে। ফরেনসিক রিপোর্ট বিষয়টি স্পষ্ট করবে। বিশেষ তদন্তদল ধারওয়াড় আদালতে গত মাসে এক রিপোর্ট পেশ করেছে। কালবুর্গি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুক পাওয়া যায়নি।

২০১৫ সালে, কর্নাটক রাজ্য ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি ৭৭ বছরের কালবুর্গি হত্যায় ব্যবহৃত এবং ৮১ বছরের পানসারে হত্যাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বুলেট ও কার্ট্রিজ পরীক্ষা করেছিল। সে পরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল পানসারে হত্যায় যে দুটি দেশি বন্দুক ব্যবহৃত হয়েছিল, তার মধ্যে একটি থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল কালবুর্গিকে লক্ষ্য করেও।

পানসারে হত্যাকাণ্ডে যে দ্বিতীয় দেশি বন্দুকটি ব্যবহার করা হয়েছিল, ব্যালিস্টিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে তা ব্যবহার করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে ৬৯ বছর বয়সী দাভোলকর হত্যাকাণ্ডেও।

সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের পর, ব্যালিস্টিক প্রমাণ থেকে জানা গিয়েছে, কালবুর্গি হত্যায় যে বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই বন্দুকই ব্যবহার করা হয়েছিল গৌরীকে খুন করবার জন্যও।

চারটি ভিন্ন হত্যাকাণ্ডে আলাদা সংস্থার তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সনাতন সংস্থার মত উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কিছু সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠিত গোষ্ঠী হিন্দু বিরোধী বলে যাদের মনে করেছে, তাদের হত্যা করেছে। ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে যুক্ত থাকার ব্যাপারে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর অন্তত ২৫ জন সদস্যের নাম উঠে এসেছে।

দাভোলকর, কালবুর্গি এবং গৌরী লঙ্কেশ মামলায় অভিযুক্ত কালাসকর। দাভোলকর হত্যাকাণ্ডে দুজন শুটারের মধ্যে সে অন্যতম। ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে গ্রেফতারির পর সে জানায়, গোষ্ঠীর নেতা হৃষিকেশ দেওদিকর এবং আইনজীবী সঞ্জয় পুনালেকর তাকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকগুলি নষ্ট করে দেবার নির্দেশ দিয়েছিল।

কর্নাটকের বিশেষ তদন্তদলের কাছে দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, ২০১৮ সালের জুন মাস নাগাদ, বিশেষ তদন্ত দল যখন গৌরী হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে, তখনই নির্দেশ আসে বন্দুক নষ্ট করে ফেলার।

কালাসকরের বিবৃতি অনুসারে, সে চারটি বন্দুক চিহ্নিত করে, সেগুলি খুলে ফেলে এবং মুম্বউ-নাসিক হাইওয়ের একটি খাঁড়িতে সেগুলি ফেলে দেয়। তার গ্রেফতারির পর সিবিআই ও অন্যান্য সংস্থা খাঁড়ি থেকে বন্দুকগুলি উদ্ধারের জন্য তল্লাশি শুরু করে।

Advertisment