২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের হত্যার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কর্নাটক পুলিশের এক বিশেষ দল বৃহস্পতিবার এই ব্যক্তিকে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলা থেকে পাকড়াও করে।
ধৃত হৃষিকেশ দেওদিকার ওরফে মুরলীর বয়স ৪৪। তার সঙ্গে উগ্র সংগঠন সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির যোগাযোগ ছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বিশেষ তদন্ত দল যে চার্জশিট জমা দেয় তাতে ১৮ নং অভিযুক্ত হিসেবে এই ব্যক্তির নাম রয়েছে।
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে যে ১৮ জনকে বিশেষ তদন্ত দলের গ্রেফতার করার কথা, তাদের মধ্যে নাম রয়েছে দেওদিকরের। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছিল যে কয়েকজন, তার মধ্যে দেওদিকর অন্যতম। হত্যাকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করার পিছনেও রয়েছে এই ব্যক্তি।
বিশেষ তদন্তদলের এক আধিকারিক যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, "ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার কাতরাস থেকে এই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।"
ঝাড়খণ্ড পুলিশের ডিজি কেএন চৌবে বলেছেন, "ব্যাঙ্গালোর পুলিশের বিশেষ তদন্তদল ধানবাদ পুলিশের সহায়তায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। সে ধানবাদের কাতরাস এলাকায় এক পেট্রোল পাম্পে কাজ করছিল। কতদিন ধরে সে এখানে ছিল, তা জানা যায়নি।"
২০১০ সাল পর্যন্তও দেওদিকর সনাতন সংস্থার হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। ওয়েবসাইটের বেশ কিছু নিবন্ধে সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির বৈঠকে তার উপস্থিতির কথা নথিবদ্ধ রয়েছে।
কর্নাটক সিটের মতে, ২০১১ সালে একটি ক্রাইম সিন্ডিকেট তৈরির সময়ে দেওদিকর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির কর্মী বীরেন্দ্র তাওয়াড়ে ওই সিন্ডিকেট তৈরির পিছনে ছিল। হিন্দু বিরোধী বলে যাদের মনে কার হবে, তাদের হত্যা করার জন্য এই গোষ্ঠী তৈরি করা হয়।
২০১৩ সালে মহারাষ্ট্রের ৬৯ বছর বয়সী যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর, ২০১৫ সালে ৮১ বছর বয়সী বামপন্থী চিন্তাবিদ গোবিন্দ পানসারে, এবং ২০১৫ সালে কন্নড় শিক্ষাবিদ এমএম কালবুর্গীকে হত্যার পিছনেও এই গোষ্ঠী যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।
যে উগ্র দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী প্রথম অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ পেয়েছিল তাওয়াড়ে ও দেওদিকার দুজনেই তার সদস্য ছিল বলে অভিযোগ। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছিল রাজেশ বাঙ্গেরা। তাকে ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তদল গ্রেফতার করেছে।
২০১৬ সালে সিবিআই তাওয়াড়েকে দাভোলকর হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করলেও, ফের এই গোষ্ঠী ৩৭ বছর বয়সী অমোল কালের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হতে থাকে। অমোল কালে পুনের হিন্দু জনজাগৃতি সংস্থার পূর্বতন আহ্বায়ক ছিল।
কর্নাটকের বিশেষ তদন্ত দল বলেছে, "নেতৃ্ত্ব চলে যায় অমোল কালের হাতে। এই সিন্ডিকেটের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা ছিল অমিত দেগভেকর, বিকাশ পাটিল ওরফে দাদা এবং দেওদিকার।"
নিজেদের নোটে বিশেষ তদন্তদল বলেছে, "এই গোপন দলের সদস্যদের সক্রিয়ভাবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গুলি ছোড়া ছাড়াও তাদের বোমা তৈরি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি ও সন্ত্রাসের আবহ তৈরি।"