রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত বুধবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সংগঠনের বার্ষিক দশেরার অনুষ্ঠানে বলেছেন, "মহিলাদের কাজ করার স্বাধীনতা এবং সমস্ত ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া অপরিহার্য।"
ভগবত বলেছেন, “আমাদের নিজের পরিবারের মধ্যে থেকে, সংগঠন মারফৎ সমাজে নিয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টা সফল হবে না।”
এ দিন আরএসএসের পক্ষ থেকে পর্বতারোহী সন্তোষ যাদবকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
মহিলাদের সম্মান আরএসএস শুরু থেকে জানিয়ে আসে। অতীতে উদাহরণ দিয়ে তা তুলে ধরেন মোহন ভগবত। বলেন, “ডক্টর সাবে (ডঃ কে বি হেডগেওয়ার)-এর সময় থেকেই সমাজে কৃতিত্বপূর্ণ, বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত মহিলাদের আরএসএস নিজেদের সংগঠনের কার্যাবলীতে অনুপ্রেরণার উৎস বলে স্বীকৃতি জানিয়েছে। সেই সময় আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুসিয়াবাই কালে। তারপরে, ভারতীয় মহিলা সম্মেলনের প্রধান, রাজকুমারী অমৃত কৌরও আমাদের শিবিরের অংশ হয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, প্রধান অতিথি ছিলেন একজন মহিলা এবং এই ধারা তখন থেকে চলছে।" ভগবতের সংযোজন, “জরুরি অবস্থার পরে, আরএসএসের একটি আকোলায় সংগঠনের এক অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন একজন মহিলা। আমি তখন সেখানকার প্রচারক ছিলাম। ঔরঙ্গাবাদের কুমুদতাই রাংনেকার সেবার বিজয়াদশমীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।"
ভগবত বলেছিলেন যে সমাজ পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত এবং "কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে আমরা বিতর্ক করি না।" ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরএসএস প্রধান বলেন, “কারণ আমরা জানি যে নারী, পুরুষ উভয়কে ছাড়া সমাজ থাকতে পারে না এবং কোনও কিছু সৃষ্টি করা যায় না।। নারী, পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। এটাই ভারতীয় দর্শন। সুতরাং জাতি গঠনের কাজটি পুরুষ এবং মহিলাদের একত্রেই করতে হয়। সমস্ত সামাজিক কাজ (সংঘ কর্তৃক গৃহীত) পুরুষ এবং মহিলারা একসঙ্গেই করে থাকে। সেই ডাক্তার সাবের সময় থেকেই, যার মূল উদ্দেশ্য চরিত্র গঠন। এ জন্য দুটি শাখাও রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি কাজে, পুরুষ ও মহিলা একত্রিত হয় এবং একে অপরের পরিপূরক হয়।”
"যদি সমাজকে সংগঠিত করতে হয়, নারী এবং তাদের মাতৃশক্তি উপেক্ষা করা যাবে না"- বলেছেন সংঘ প্রধান মোহন ভগবত। তাঁর কথায়, “আমাদের মহিলাদের আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা তাদের মা বলি, আমরা তাদের জগৎ জননী (মহাবিশ্বের স্রষ্টা) হিসাবে কল্পনা করি। কিন্তু এরপরও কেন জানি না যে, আমাদের তাদের কার্যকলাপের ক্ষেত্রকে সীমিত করেছি। পরবর্তীকালে বিদেশী হানাদাররা এলে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বৈধতা পায়। হানাদাররা চলে গেলেও আমরা বিধিনিষেধ মেনে চলেছম। আমরা কখনই তাদের মুক্ত করিনি।”
ভগবতের দাবি, “আমরা হয় মহিলাদের প্রার্থনা কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখি বা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর হিসাবে চিহ্নিত করি এবং তাদের ঘরে বন্ধ রাখি। এটা দূর করার জন্য, আমাদের তাদের সর্বক্ষেত্রে ক্ষেত্রে সমান অধিকার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দিয়ে আরও সক্রিয় করতে হবে।”
আরএসএস প্রধান জানান যে ২০১৭ সালে, তাদের মহিলা কর্মীরা দেশে 'মাতৃশক্তি' নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। নমুনাটিতে সর্বস্তরের মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ সমীক্ষার উদ্বোধন করেছিলেন। ভগবতের কথায়, "সমীক্ষার ফলাফল ছিল যে, একজন পুরুষ যা করতে পারেন, একজন মহিলাও তা করতে পারেন। কিন্তু নারীরা যা পারে, পুরুষ তা পারে না। তাই নারীদের কাজের স্বাধীনতা এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া অপরিহার্য। সুতরাং, আমাদের নিজের পরিবারের মধ্যে পরিবর্তনের সঙ্গে শুরু করতে হবে, যা সমাজে, সংগঠনের মাধ্যমে পৌঁছতে হবে। যতক্ষণ নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টা সফল হবে না।”
কোন ভাষায় মেয়েদের পড়ানো হবে? ভগবতের দাবি, "একটি কল্পকাহিনী আছে যে একটি ভাল ক্যারিয়ার অর্জনের জন্য ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন। এটা সত্যি না। আমরা যদি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করি, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই আঢ্চলিক মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন।"
ভগবতের কথায়, “যতদিন বাবা-মা তাদের সন্তানদের শেখাতে থাকেন যে, পছন্দ হোক বা না হোক- জীবনের লক্ষ্য হল পড়াশোনা করা এবং ভাল অর্থ উপার্জন, ততক্ষণ আমাদের দেশে সংস্কৃতিবান এবং দায়িত্বশীল নাগরিক থাকবে না। তারা শুধু অর্থ উপার্জনের মেশিনে পরিণত হবে।”
তিনি জনগণকে তাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার দিকে মনোনিবেশ করার এবং তাদের চারপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।