নভেল করোনা ভাইরাসের দাপট এখনও অব্যাহত দেশে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৭ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন এই কোভিড-১৯ ভাইরাসে। কোন পথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্র? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানালেন এমনই কিছু কথা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে দেশ খুব ভালোভাবে লড়াই করেছে। একটু তাড়াতাড়িই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল না?
না। আমি এটাই বলব যে সমস্ত প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভারত এই গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। ধাপে ধাপে পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয়ভাবে সেগুলিকে পরিচালনা করেছে। আমরা এই মুহুর্তে সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের অনেক দেশের থেকে ভালো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। অন্যান্য দেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে হার আমাদের সেই সংখ্যাই দেখাচ্ছে কিছুটা হলেও ভালো জায়গায়। আপনাদের নিশ্চই মনে থাকবে ৭ জানুয়ারি চিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কথা জানায়। আমরা তার পরের দিনই অর্থাৎ ৮ তারিখ প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসি। ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আগামীতে কীভাবে সামাল দেব তার একটা পূর্বপরিকল্পনা করি এবং রাজ্যগুলিকেও তা জানিয়ে দেই। ২-৩ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিতে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করি। শুরু করি দেশব্যাপী নজরদারি প্রক্রিয়া এবং চেষ্টা করে যেতে আরও প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত করা যায় এই পরীক্ষাটিকে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং তার প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনাও করি। আমাদের দেশের রোগসংক্রমণ পদ্ধতি, আর্থ-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এই সবদিক বিবেচনা করে এবং বিশ্বের অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়েই কোভিড-১৯ লড়াইয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকেই প্রতিষেধক হিসেবে মেনে নিয়েছি।
তবে ভারতে ভাইরাসটির তেজ কম এমন কোনও প্রমাণ আছে? ইন্দোর এবং আমেদাবাদে তাহলে এত প্রাণহানি হল কেন?
দেখুন এই রোগের বিস্তারের যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে তা বিস্তারিত না বললে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। ভারতে যে কোভিড-১৯ ভাইরাস তা কিন্তু বিদেশ থেকে এসেছে। চিনে প্রকাশিত একটি পেপারে বলা হয়েছে যে এই ভাইরাসের দুটি ভিন্ন রূপ হয়েছে, একটি এস এবং একটি এল। ভাইরাসের এই এল রূপটি অনেক বেশি সংক্রমণযোগ্য এবং জীবাণু বিস্তারে বেশি সক্ষম। তবে হ্যাঁ এখনও গবেষণায় অনেক ভুলত্রুটি থেকেই যাচ্ছে। সারস কোভ-২ ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসের মূল কাঠামোকে এখনও বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সংক্রমণে কিন্তু অনেকগুলি বাহ্যিক ফ্যাক্টরও থাকছে যা গবেষণায় ধরা যাচ্ছে না। ইন্দোর এবং আমেদাবাদে যে তেমনই কারণে মৃত্যু হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ আমাদের কাছেও নেই।
আমরা যখন করোনা মৃতের সংখ্যা গুনতে ব্যস্ত তখন কিন্তু দেশে অনেক রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। বহু হাসপাতালে নতুন করে রোগী নেওয়া হচ্ছে না। পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি যেতে গিয়ে মারা পড়ছেন। এদের কী করোনায় মৃতদের মধ্যে ধরা হবে?
করোনায় মৃত্যু হল যখন কোনও রোগী কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সেই ভাইরাসেই মারা যাচ্ছেন। যদি তার বাইরে কোনও উপসর্গে মৃত্যু হয় তাহলে তার সঙ্গে করোনায় মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই ডেফিনেশন বলছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুকে করোনার মৃত্যু তালিকায় আনা যাবে না। অন্যদিকে যারা করোনায় আক্রান্ত নয় সেই সব রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জোর দিয়েছি। হাসপাতালগুলিও তাঁদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারছি হঠাৎ করে এই অতিমারীতে শুধু ভারতে নয় বিশ্বজুড়েই সংকটের মুখে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এই মুহুর্তে সকলেই ব্যস্ত করোনা মোকাবিলায় তাই কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান।
এটা কি সত্যি যে সেপ্টেম্বরের আগেই করোনা প্রতিষেধক পেয়ে যাব?
এটা ঠিক যে এই মুহুর্তে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সারা বিশ্বে তার সহজলভ্যতা নিয়ে হু-র সঙ্গে একত্রে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসক, গবেষক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকরা। কোভিড-১৯ এর যে খসড়া তৈরি করেছে হু, সেখানে দেখা গিয়েছে সাতটি ভ্যাকসিন এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রয়েছে, ৮২টি ভ্যাক্সিন রয়েছে প্রো-ক্লিনিকাল ট্রায়ালে। এই মুহুর্তে, ভারতীয় সংস্থাগুলিও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে।
এখন টেস্টিং কিটের কী অবস্থা?
আমাদের কাছে আগামী ১০ দিনের জন্য পর্যাপ্ত র্যাপিড টেস্টিং কিট মজুত রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা যথেষ্ট পরিমাণ কিট অর্ডার দিয়েছি যা দিয়ে ৫৬ লক্ষ টেস্ট করা সম্ভব।
মনে করা হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেক্ষেত্রে ১৫ আগস্টের মধ্যে ২.৭৪ কোটি সংখ্যা ছুঁতে পারে? কতদিন চলবে এই প্রকোপ?
অনেক রকম বৈজ্ঞানিক ব্যাখা এবং হিসেব আসছে। আমরা এটা বুঝতে পারছি যে এই মডেলগুলি সমস্ত হিসেব নিয়ে কিন্তু করা নয়। কিছু মডেল একেবারে কল্পনাভিত্তিক। কোনও রকম ডেটাভিত্তিক পরীক্ষানিরীক্ষা না করেই এই মডেলগুলিকে তৈরি করা হচ্ছে। এখনও ভারতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পরিস্থিতি। কিছু সংক্রমণ থেকে যাচ্ছে যা ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা তা নিয়ে পরিকল্পনাও করছি কীভাবে সবটা সামাল দেওয়া যায়।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন