ঘনিয়ে আসছে দুঃসময়, গরমে ফুটবে গোটা বিশ্ব! ২১০০ সালের মধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির চরম আশঙ্কা। এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের বিজ্ঞানীরা।
ঘনিয়ে আসছে দুঃসময়। এবার কার্যত গরমে ফুটবে গোটা বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প, ওজোন, ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন) অতিরিক্ত প্রভাবে ভয়ঙ্কর হচ্ছে পরিস্থিতি। আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান তাপ বৃদ্ধির কারণে বনাঞ্চলে আগুন লাগছে। এই নতুন উঠে আসা তথ্য বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিশ্বের কাছে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বিগত কয়েক বছরে জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধসের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এবার জারি চূড়ান্ত সতর্কতা। ভারতে উদ্বেগজনক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত কয়েক বছরে। ২১০০ সালের মধ্যে ৫.১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা। এমনই সতর্কতার কথা শোনাল আইআইটি খড়্গপুরের বিজ্ঞানীরা।
এসবের মাঝেই ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে এসেছে। বিগত ১২ মাস পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল। যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন স্তর থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ থেকে শুরু করে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা এবং পরিবেশবিদরা ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। তবে সেই সব কথা কানে তা তুলে চলছে অবাধে বৃক্ষ নিধন। পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ। ফলস্বরূপ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধাক্কা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাত্রায় পড়তে শুরু করেছে।
সম্প্রতি একটি রিপোর্ট সামনে এসেছে যাতে বলা হয়েছে বিগত ১২ মাস পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর । 'ক্লাইমেট রিসার্চ' নামে একটি অলাভজনক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়কাল ছিল পৃথিবীতে রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা। কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হচ্ছে যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। এ কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সামনে এনেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
পরিসংখ্যান কি বলে?
প্রায় ৭.৩ বিলিয়ন বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ এই সময় কালের মধ্যে ১০ দিন চরম তাপমাত্রা অনুভব করেছে। যার পরিমাণ স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে তিনগুণ বেশি বলেও জানা গিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে বিশ্বব্যাপী সম্মত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমার খুব কাছাকাছি।
ক্লাইমেট সেন্ট্রালের এক বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু পার্শিং বলেন, “আমি মনে করি এই বছরের পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় আমাদের সামনে পরিষ্কার। আমরা কেউ আর নিরাপদ নয়। প্রত্যেকেই বছরের কোনো না কোনো সময়ে অস্বাভাবিক তাপমাত্রার সাক্ষী থেকেছে পৃথিবী”।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি, লক্ষণ কি?
বৈশ্বিক তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে।
১. অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ উষ্ণ তাপমাত্রায় বাতাসে বেশি জলীয় বাষ্প আটকে থাকে। তাই বৃষ্টি হলে প্রায়ই ঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আফ্রিকায় একই ধরনের ঝড় ড্যানিয়েল অন্তত ৪ থেকে ১১ হাজার মানুষের প্রাণহানির কারণ।
২. ভারতের ১.২ বিলিয়ন মানুষ, বা জনসংখ্যার প্রায় ৪৬ শতাংশ, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা ব ছরে কমপক্ষে ৩০ দিন অনুভব করছেন।
৩. ব্রাজিলের খরা নদীগুলোকে শুষ্ক করে দিয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ জল ও খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা।
৪. মারাত্মক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন এর মধ্যে 93 জনের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র মাউই দাবানলের কারণে (১০০ বছরের মধ্যে আমেরিকার সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল)।
৫. কানাডায় প্রতি ২০০ জনের মধ্যে একজন দাবানলের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
৬. জ্যামাইকা গত ১২ মাসে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রার চেয়ে অন্তত চার গুণ বেশি উষ্ণতার অভিজ্ঞতা পেয়েছে। তাই বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে বেশি প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে দেশটি।
“পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনধারা পরিবর্তন করে সংকটের জন্য আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বিভিন্ন জায়গায় ভিন্নভাবে দেখা যায়", বলেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হেলথ অ্যান্ড গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টের অধ্যাপক কিস্টি ইবি।