ছেলেকে খুনের পর সুচনা শেঠ খেলনা ও কাপড় ভর্তি ব্যাগে চার বছরের ছেলের মৃতদেশ লুকানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ সেই ব্যাগের তল্লাশি চালালে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। পুলিশ জানিয়েছে, যে ব্যাগ থেকে ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় সেই ব্যাগের উপরে খেলনা এবং কাপড় ছিল। পরে কর্মকর্তারা সুচনাকে পুরো ব্যাগটি খুলে দেখাতে বলেন। জামাকাপড়-খেলনা সরিয়ে পুলিশ ছেলের মৃতদেহ ব্যাগের ভিতর থেকে উদ্ধার করে।
গোয়ার একটি হোটেলে নিজের চার বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া বেঙ্গালুরু এক স্টার্ট-আপের সিইও সুচনা শেঠ ৬ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত হোটেলের রুমটি বুক করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি চেক আউট করেন বলেই পুলিশ জানিয়েছে। হোটেলের কর্মীদের তিনি জানান “বেঙ্গালুরুতে জরুরি কাজ” থাকায় তিনি চেক-আউট করতে চান এবং তাদের সেই মত ব্যবস্থা করার অনুরোধও করেন তিনি। পাশাপাশি খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিজের ছেলেকে খুন করে লাশ খেলনার নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন সুচনা শেঠ।
বেঙ্গালুরুতে একটি স্টার্ট আপ কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সুচনা শেঠকে মঙ্গলবারই তার চার বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, গোয়া পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার নিয়মিত মেডিকেল চেক আপ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে যে সুচনা কর্ণাটকের চিত্রদুর্গা জেলায় তার ছেলের মৃতদেহ একটি ব্যাগে ভরে ক্যাবে করে পালানোর চেষ্টা করার সময় ধরা পড়ে সূচনা।
জিজ্ঞাসাবাদের পর, সুচনা পুলিশকে জানান যে তার ছেলে গোয়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে ছিল, যা পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। মামলায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং মহিলাকে ছয় দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, ছেলের দেহ ময়না তদন্তের পর বুধবার বেঙ্গালুরুতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
নিজের সন্তানকে খুনের অভিযুক্তে বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্ট-আপের সিইও সূচনা শেঠকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গোয়ার একটি হোটেলে তাঁর চার বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই পুলিশ সুচনাকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার আদালতে পেশ করা হয়েছিল সূচনাকে। তাঁকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয় আদালতের তরফ থেকে। এদিকে পুলিশি জেরায় সূচনা দাবি করেন, নিজের ছেলেকে খুন করার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এদিকে শিশুটির ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে কমপক্ষে ৩৬ ঘন্টা আগেই নিজের কোলের সন্তানকে খুন করেন মা সূচনা।
ডাঃ কুমার নায়েক, যিনি মৃত শিশুটির ময়নাতদন্ত করেন বলেছেন, “শিশুটিকে ৩৬ ঘন্টারও বেশি আগে ‘হত্যা’ করা হয়েছিল। তাকে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করার কাজে বালিশ বা তারের ব্যবহার করা হয়।”
সূচনা কর্ণাটকের চিত্রদুর্গা জেলা থেকে তার ছেলের দেহ একটি ব্যাগে ভরে একটি ক্যাবে করে পালানোর চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েন। গোয়ায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারও জানিয়েছেন যে শিশুটিকে “সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়েই শিশুটিকে ” শ্বাসরোধ” করে খুন করা হয়েছিল।
রামমন্দির উদ্বোধনের প্রস্তুতি মোদীর: < Ram Temple inauguration: রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে ‘আবেগপ্রবণ’ মোদী, শুরু ১১ দিনের বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান >
পুলিশ জানিয়েছে যে সূচনা শেঠ ২০১০ সালে ভেঙ্কট রমনকে বিয়ে করেছিল এবং ২০১৯ সালে এই দম্পতির একটি ছেলে হয়, কিছু সময় পরই সম্পর্কের অবনতি হয় দুজনের। স্বামীর বক্তব্য অনুসারে, দু বছর আগেই দম্পতি আলাদা হয়ে যান এবং গত দুই বছর ধরে তারাঙ্কোন যোগাযোগ করেনি একে অপরের সঙ্গে।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে “তাদের দুজনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিল। বেঙ্গালুরুর একটি আদালতের সাম্প্রতিক আদেশে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে বাবাকে প্রতি রবিবার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে সূচনাকে। গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে, তিনি তার ছেলেকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেননি।
জিজ্ঞাসাবাদের সময়, মহিলা প্রথমে দাবি করেন যে তিনি তার ছেলেকে হত্যা করেননি। “তিনি দাবি করেছিলেন যে তার ছেলে ঘুমিয়ে ছিল এবং সে জানে না কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। ক্যাব চালক পুলিশকে জানিয়েছেন যে গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার সময় তিনি একেবারেই শান্ত মেজাজেই ছিলেন।
এদিকে গোটা ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ খুনের আগে ছেলেকে কাশির সিরাপের “অতরিক্ত ডোজ” দেওয়া হয়েছিল। সেই সম্ভাবনা পরীক্ষা করছেন তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা। ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি খালি কাশির সিরাপের বোতল। তিনি তার লাগেজে এক বোতল কাশির সিরাপ নিয়েই হোটেলে প্রবেশ করেন বলেই জেনেছে পুলিশ। পরে আবার হোটেল কর্মীদের দিয়ে আরও এক বোতল কাশির সিরাপ আনেন তিনি। সেই সময় সূচনা তাদের জানান তার গলা ব্যথা রয়েছে। হোটেলের কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন মহিলার অনুরোধে এক বোতল কাশির সিরাপ আনেন তারা।
পুলিশের একটি সূত্র আরও বলেছে যে শেঠ শনিবার (৬ জানুয়ারি) তার স্বামীকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেন তিনি বেঙ্গালুরুতে রবিবার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার স্বামী, ভেঙ্কটরামন একটি এআই ফার্মও চালান, সেই সময় তিনি বেঙ্গালুরুতে ছিলেন। “কিন্তু রবিবার স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে পরের দিন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে জাকার্তার উদ্দেশ্যে রওনা হন,”।
পুলিশ জানিয়েছে যে হোটেলে সিসিটিভি চালু ছিল, এবং তদন্তের সময় এর ফুটেজ পর্যালোচনা করা হবে। পুলিশ আরও জানিয়েছে শেঠের মা আর নেই, বাবা থাকেন কলকাতায়। এদিকে চার বছরের ছেলেকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার তিন দিন পর তদন্তকারী আধিকারিকরা বলেছেন তারা একটি টিস্যু পেপারের টুকরোতে হাতে লেখা একটি "নোট" উদ্ধার করেছে যেটি সূচনার।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে 'নোটটি' ইঙ্গিত দেয় যে সূচনা তার স্বামীর সঙ্গে ছেলেকে কোনমতেই দেখা করতে দিতে চান না।
সূচনা ও ভেঙ্কটরামন পিআর ২০১০ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং ২০১৯ সালে তাদের একটি ছেলে হয়। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে কোন কারণে অশান্তি বাড়তে থাকে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও চলছে দুজনের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, কথিত নোটটি, ইংরেজিতে, একটি আইলাইনার ব্যবহার করে একটি টিস্যু পেপারে লেখা ছিল। তদন্তে জড়িত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "নোটটি প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি তার মানসিক অবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে।"
পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের বিবৃতি রেকর্ড করেছে এবং ঘর থেকে একটি বালিশ, তার স্যুটকেস এবং রক্তমাখা তোয়ালে এবং বেশ কিছু কাশির সিরাপের বোতল উদ্ধার করেছে।
এখন পর্যন্ত গোয়া হত্যা মামলা:
👉🏽 সুচনা শেঠ, বেঙ্গালুরুর একটি AI স্টার্টআপের সিইও যিনি সোমবার রাতে গোয়ার একটি হোটেল থেকে তার ৪ বছরের ছেলেকে হত্যার অভিযোগে পালানোর সময় গ্রেফতার হন ।
👉🏽 সুচনা শেঠ শেষ পর্যন্ত কর্ণাটকের চিত্রদুর্গা জেলা থেকে তার ছেলের লাশ একটি ব্যাগে ভরে একটি ক্যাবে পালানোর চেষ্টা করার সময় ধরা পড়ে। পুলিশ কিভাবে তাকে ধরে? হোটেলের কর্মীরা তার ঘরের মেঝেতে রক্তের দাগ নিয়ে পুলিশকে সতর্ক করে। পুলিশ তখন তার ক্যাব চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যিনি কিছু না বুঝতে দিয়েই সুচনাকে থানায় নিয়ে যান।
👉🏽 পুলিশের মতে, সুচনা শেঠ ৬ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত রুম বুক করেছিলেন, কিন্তু তার আগে চেক আউট করেছিলেন।
👉🏽 তাকে গ্রেফতারের তিন দিন পর, তদন্তকারীরা বলেছে যে তারা একটি হাতে লেখা "নোট" উদ্ধার করেছে। যেটি তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যতে সাহায্য করবে।