নারকীয় খুনে ভরসা Google, চোখে কপালে তোলার মত ঘটনায় শিউরে উঠলো গোটা দেশ। কীভাবে খুন করবেন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে, সেটাই সার্চ করেছিলেন Google-এ। অবশেষে সামনে এল একের পর এক আইডিয়া। তা কাজে লাগিয়েই নারকীয় হত্যা। বুক কাঁপিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা সামনে আসতেই ঘটনার বীভৎসতায় শিউরে উঠলো গোটা দেশ। অবশেষে পুলিশের জালে অপরাধের ‘মাস্টারমাই’ন্ড। আদালত ইতিমধ্যেই এই নারকীয় খুনে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সেই সঙ্গে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে প্রশান্ত সুচিত্রার শরীর থেকে প্রথমে সোনার গয়না খুলে ফেলেন। ঠিক তারপর তিনি হাঁটুর নীচে তার পা কেটে ফেলেন এবং বাড়ির পিছনে একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানেই তিনি সুচিত্রার শরীরের বাকী অঙ্গগুলি ফেলে ফের গর্তটি ভরাট করেন।
কেরালার এক আদালত বান্ধবী খুনের অভিযোগে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। দিনটা ছিল ২০ মার্চ, ২০২০। ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কে খুনের পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন আগেই। কীভাবে সেটা বাস্তবায়িত করবেন তা তিনি গুগল সার্চে টাইপ করেন। কীভাবে তার বান্ধবীকে হত্যা করবেন? এর কিছুক্ষণ পরে, সঙ্গীত শিক্ষক প্রশান্ত নাম্বিয়ার তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সুচিত্রা পিল্লাই কে শ্বাসরোধ করে খুন করে।
পরে সেই রাতে, প্রশান্ত আবার অনলাইনে আসে্ন এবং কীভাবে মৃতদেহটি ধামাচাপা দেবেন তা আবারও গুগলে সার্চ করেন। ঠিক এরপরেই একটি সিনেমা দেখে পুলিশকে কীভাবে পুলিশকে প্রতারণা করবেন তার উপায়ও সামনে আনেন। খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে বাড়ির পেছনে একটি গর্তে ফেলে দেন তিনি। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। সব জেনে শুনে একেবারে হাঁ দুদে গোয়েন্দারা।
সুচিত্রাকে খুনের দায়ে প্রশান্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় কেরলের একটি আদালত। তথ্য অনুযায়ী,জানা গিয়েছে ২০১৯ সালে দুজনের সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, সুচিত্রা ও প্রশান্তের আলাপ ২০২০ সালেই। তবে তিনি ইতিমধ্যে বিবাহিত ছিলেন। পেশায় বিউটিশিয়ান সুচিত্রা প্রশান্তের স্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। ২০১৯ সালে তাদের সন্তানের মুখেভাত অনুষ্ঠানে দু’জনের প্রথম দেখা
সম্পর্কে থাকার পর মাঝে মধ্যেই সুচিত্রা প্রশান্তের থেকে মোটা টাকা দাবি করতেন। বিরক্ত হয়ে সুচিত্রাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন প্রশান্ত। এরপর তিনি তাকে তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যান। চার্জশিট অনুসারে, প্রশান্ত সুচিত্রাকে জানিয়েছিলেন, মার্চ মাসে তারা কয়েকদিন একসঙ্গে থাকবেন। ইতিমধ্যে তিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানকে কোল্লামে তার বাড়িতে এবং তার বাবা-মাকে কোঝিকোড়ে পাঠিয়েছিলেন প্রশান্ত। পুলিশ দুজনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও উদ্ধার করেছে। পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, সুচিত্রা ১৭ মার্চ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোল্লামের বিউটিশিয়ান ট্রেনিং একাডেমিতে যান।
সুচিত্রা তার পরিবারকে জানায় যে সে একটি ক্লাসে যোগ দিতে কোচি যাচ্ছেন। সেই সন্ধ্যায়, প্রশান্ত তাকে কোল্লামের হাইওয়ের একটি নির্জন এলাকা থেকে তুলে নিয়ে ২৭০ কিলোমিটার দূরে কোন এক গোপন আস্থানায় নিয়ে যান। তারপর দুজনেই ২০শে মার্চ পর্যন্ত প্রশান্তের বাড়িতে থাকেন। সুচিত্রা পরিবারকে জানান যে তিনি ২২ মার্চ ফিরবেন। পুলিশ রেকর্ড অনুসারে, ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সুচিত্রার ওপর হামলা চালায় প্রশান্ত। শ্বাসরোধ করার জন্য একটি বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করেন প্রশান্ত। খুনের পর চাদর দিয়ে তার দেহ ঢেকে ফেলেন।
সহকারী পুলিশ কমিশনার বি গোপকুমারের জানিয়েছেন, খুনের পর প্রশান্ত তারপর ত্রিশুর চলে যান এবং তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যান, সেটি বন্ধ করে রাখেন। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য, প্রশান্ত ত্রিশুরের একটি থানার কাছে ফোনটি চালু করেছিলেন। তিনি সেই জায়গায় যে আছেন তা দেখানোর জন্য তিনি তার ফোনটি কিছুক্ষণের জন্য চালু রেখেছিলেন। পরে, তিনি ফোন এবং সিম উভয়ই ভেঙে ফেলেন।
ফের তিনি তার ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর প্রশান্ত সুচিত্রার শরীর থেকে সোনার গয়না খুলে ফেলেন। ঠিক তার পরই ঠান্ডা মাথায় হাঁটুর নীচে তার পা পর্যন্ত কেটে ফেলেন এবং বাড়ির পিছনে একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে সুচিত্রার দেহের অংশগুলি ফেলে দেন। শরীরের বিভিন্ন অংশে পেট্রোল ছিটিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেন। এছাড়াও, গর্তটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেন। এদিকে সুচিত্রার পরিবার ইতিমধ্যেই থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ তদন্তে নেমে প্রশান্তের কল হিস্ট্রি দেখে তাকে গ্রেফতার করে।
তদন্তকারী অফিসার বি গোপকুমার বলেছেন যে তার কলহিস্ট্রি ডিলিট করে প্রশান্ত বারে বারে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তার মোবাইল ট্র্যাক করে জানতে পারে গুগলে প্রশান্ত একাধিকবার কীভাবে এক আধ্যাত্মিক গুরু তার স্ত্রীকে হত্যা করেন সেই বিষয় টাইপ করেছিলেন। সেই সূত্র ধরে প্রশান্তকে জেরা করতেই পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে প্রশান্ত। পুলিশ সূত্রে খবর, মামলার কোন প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার প্রমাণও খুনের অভিযোগ প্রমাণে সাহায্য করেছে।