আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়ে সিএজি রিপোর্টে ফাঁস চমকে দেওয়ার মত তথ্য। একটি মোবাইল নম্বরেই রেজিস্ট্রেশন লক্ষাধিক মানুষের। ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অর্থাৎ CAG-এর একটি রিপোর্টে, আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (PMJAY) সম্পর্কে চমকে দেওয়ার মত রিপোর্ট সামনে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে এই প্রকল্পের প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ লক্ষ সুবিধাভোগীর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে একই মোবাইল নম্বরে। লোকসভায় পেশ করা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অডিট সংক্রান্ত রিপোর্টে CAG তথ্য দিয়েছে। পাশাপাশি পেনশন প্রকল্পের তহবিল সরিয়ে ভিন্ন প্রকল্পের প্রচারের কাজে লাগানো হয়েছে বলেও সিএজির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষ বিষয় হল যে মোবাইল নম্বর থেকে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ লোকের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে সেই নম্বরটিও ভুল। অর্থাৎ সেই নম্বরটির কোনও অস্বিত্ব নেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেটাবেস অনুসারে যে কোন সুবিধাভোগী সম্পর্কিত রেকর্ড খুঁজে পেতে মোবাইল নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরিচয়পত্র ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে যাওয়া যায়। মোবাইল নম্বরটি ভুল হলে, ই-কার্ড হারিয়ে গেলে সুবিধাভোগীকে চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। অর্থাৎ, এর পরে সুবিধাভোগীদের পক্ষে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ।
বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সূত্রে জানানো হয়েছে যাচাইকরণ প্রক্রিয়া এবং সুবিধাভোগীর যোগ্যতা নির্ধারণে মোবাইল নম্বরের কোনও ভূমিকা নেই। মোবাইল নম্বরটি শুধুমাত্র প্রয়োজনে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। এটি একটি ভুল ধারণা যে কেউ মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে পারে।
'অযোগ্য পরিবাররাও আয়ুষ্মান ভারতে কোটি টাকা লাভ করেছে', এই সংক্রান্ত একটি অডিট রিপোর্ট সিএজি সংসদে জমা দিয়েছে। সিএজি আয়ুষ্মান ভারত প্রধান মন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (AB-PMJAY) ডাটাবেসে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছে, যার মধ্যে অবৈধ নাম, অবাস্তব জন্ম তারিখ, নকল স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে দুটি বড় অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেছে। যা ইতিমধ্যেই সংসদে পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রামের (এনএসএপি) বেশ কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক পেনশন প্রদানে অবহেলা করা হয়েছে বলেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিএজি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের আওতায় বিপিএল পরিবারের লোকজনদের সামাজিক পেনশন দেওয়া হয়।
রিপোর্ট অনুসারে, ২৬টি রাজ্যের সরকার তাদের মৃত্যুর পরেও প্রায় ২১০৩ জন সুবিধাভোগীকে ২ কোটি মূল্যের পেনশন প্রদান করেছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিএজি তদন্ত চালায়। সেই রিপোর্ট সংসদে জমা দিয়েছে সিএজি। রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়েছে এই প্রকল্পের অধীনে তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ (আইইসি) কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করা প্রায় ২.৮৩ কোটি মূল্যের তহবিল অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, ছয়টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৫৭.৪৫ কোটি টাকার তহবিল অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের জন্য সরানো হয়েছে।
পাশাপাশি ২৬ টি রাজ্যের মধ্যে, মৃত্যুর পরেও সুবিধাভোগীদের সর্বাধিক অর্থ প্রদান করা হয়েছে। মণিপুর, মিজোরাম এবং পুদুচেরি 'মৃত' সুবিধাভোগীদের সর্বনিম্ন পরিমাণ অতিরিক্ত পেনশন প্রদান করেছে। রিপোর্ট অনুসারে সিএজি জানিয়েছে, ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম (এনএসএপি) থেকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক (এমওআরডি) তহবিল সরিয়ে নিয়েছে, যার মধ্যে বার্ধক্য পেনশন স্কিম প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তার অন্যান্য প্রকল্পগুলির কিছু প্রচার করার জন্য,। এই রিপোর্ট মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয়।