বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) র্যাডারে ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ! এই সিরাপগুলি ব্যবহারে ইতিমধ্যেই একটি সতর্কতা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। কেন এই সতর্কতা? WHO জানিয়েছে এই সিরাপগুলির মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা বিষাক্ত এবং সম্ভাব্য মারাত্মক। দিন কয়েক আগেই আফ্রিকায় ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়। তারপরই এই কাশির সিরাপ ব্যবহারে সতর্কতা জারি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
আর এর পরেই মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের তরফেও একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়। যাতে সংস্থা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলে, সকল প্রকার গাইড লাইন মেনেই সংস্থা ওষুধ প্রস্তুত করে। কিন্তু এরপরেই সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তারা সংস্থা পরিদর্শন করে বেশ কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করেন। আর সেই রিপোর্ট সামনে আসতেই তড়িঘড়ি হরিয়ানা সরকার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড-এ কাশির সিরাপ উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে।
কেন্দ্রীয় ও হরিয়ানা রাজ্যের ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগের যৌথ পরিদর্শনের পরে উৎপাদন সংক্রান্ত প্রায় ১২টি ত্রুটি পাওয়া গেছে। এসবের ভিত্তিতে সকল প্রকারের উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে সরকারকে জবাব দিতে হবে। হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ জানিয়েছেন, ওষুধ কোম্পানির নমুনা কলকাতার সেন্ট্রাল ড্রাগ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এখনও রিপোর্ট আসেনি, তার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাত দিনের মধ্যে জবাব না দিলে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ডব্লিউএইচও-র বিবৃতিতে একটি আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে এই চারটি কাশির সিরাপ ভারতের কোথাও বিক্রি হয়নি। এই পণ্য রপ্তানির অধিকার শুধুমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, “কোম্পানি এই সিরাপগুলি তৈরি করেছে এবং শুধুমাত্র গাম্বিয়াতে রপ্তানি করেছে। গাম্বিয়াতে রপ্তানি করা কাশির সিরাপ ভারতের কোথাও বিক্রি বা বিতরণ করা হয় না। কোম্পানি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই রিপোর্ট আসবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে”।
আরও পড়ুন: < ডেঙ্গু দমনে ময়দানে আশা কর্মীরা! হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, ভয় ধরাচ্ছে মৃতের সংখ্যাও >
সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) এর একটি প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে যে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড হরিয়ানা সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত। সংস্থা Promethazine Oral Solution BP, Cohexanaline Baby Cough Syrup, Macoff Baby Cough Syrup এবং Magrip N Cold Syrup এই চারটি কাশির সিরাপ তৈরি করেছে এবং এই কাশির সিরাপগুলি কেবলমাত্র গাম্বিয়াতেই রপ্তানি করা হয়। ভারতের অন্যত্র আর কোথাও এই সিরাপ বিক্রি করা হয়নি বলেই জানান হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে।
ডাব্লুএইচও বলেছে, “গাম্বিয়াতে যে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে তার সঙ্গে সরাসরি এই কাশির সিরাপের যোগসূত্রের সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে”। মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ নিয়ে সাবধানতা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এই চারটি সিরাপ হল প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কোফ্যাক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ। এই সমস্ত সিরাপগুলি হরিয়ানার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি। WHO-এর সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে যে চারটি পণ্যের প্রতিটির নমুনার বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই সিরাপগুলিতে ক্ষতিকারক ডায়েথিলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন রয়েছে। যেগুলো সেবন করা মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।