আরবিআই অর্থাৎ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে মজুত থাকে বেশ কিছু টাকা, এই মুহূর্তে যার পরিমাণ ৯.৫৯ লক্ষ কোটি। এর প্রায় এক তৃতীয়াংশই কেন্দ্র চেয়ে বসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে। অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র এবং শীর্ষ ব্যাঙ্ক যৌথ ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে।
অর্থ মন্ত্রকের তরফ থেকে এমন 'আবদার' মোটেও ভালো চোখে দেখছে না আরবিআই। শীর্ষ ব্যাঙ্ক একে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছে এখনও পর্যন্ত। আরবিআই-এর বক্তব্য, এতে দেশের আর্থিক স্থিতাবস্থা নষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে। স্বভাবতই প্রস্তাবে রাজি হয়নি শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
কেন্দ্র জানিয়েছে, আরবিআই আইন, ২০১৭ কিছুটা হলেও পক্ষপাতদুষ্ট। বৈঠকে সরকারি প্রতিনিধি না থাকায় বর্তমান কাঠামোতে কেন্দ্রের হাতে আইনি ক্ষমতা তেমন নেই বললেই চলে। কেন্দ্রের যুক্তি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাড়তি ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে। সেই বাড়তি অঙ্কই নিজের কাছে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। ভারত সরকার নাকি এই টাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে দিতে চাইছে।
আরও পড়ুন, ‘মানুষের স্বার্থ সবচেয়ে আগে’; আরবিআই-এর স্বশাসন প্রসঙ্গে সুর নরম কেন্দ্রের
কেন্দ্রের মত, শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত অর্থ যে ভাবে কাজে লাগায়, তা দেশের আর্থিক বাজারের বিকাশের পক্ষে সহায়ক নয়। এমন কী বাড়তি মুনাফা শীর্ষ ব্যাঙ্ক থেকে যে উপায়ে কেন্দ্রের কাছে এসে পৌঁছয়, তা নিয়েও যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে কেন্দ্রের। এই ব্যাপারে আরবিআই নাকি অত্যন্ত 'রক্ষণশীল'। মুনাফার পুরোটাই সরকারের কাছে আসা উচিৎ, এমনটাই মনে করে অর্থ মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থ বর্ষে আরবিআই সরকারকে ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা দিয়েছিল। তার আগের বছরে ৩০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের তুলনায় আরবিআই নাকি নিজের কাছে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রাখে( দেশের মোট আয়ের ২৮ শতাংশ)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সিঙ্গাপোরের মতো দেশে এই পরিমাণ অনেকটাই কম।
বিগত কয়েক মাসে কেন্দ্র-আরবিআই তরজা বেড়েই চলছে একটু একটু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে জনসমক্ষে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এক বক্তৃতায়। বিরল আচার্য বলেন কেন্দ্র আরবিআই-এর স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরম বলেন, কেন্দ্র এবং আরবিআই -এর মতোনৈক্য সকলের সামনে না এনে মিটিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
রাজনীতি মহলে বিগত কয়েক দিন কেন্দ্র-আরবিআই মতবিরোধ নিয়ে জোর আলোচনা হয়েছে। ‘ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম’ আয়োজিত ইন্ডিয়া লিডারশিপ সামিটে জেটলি বলেন, “২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে ষখন আর্থিক সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, অর্থনীতিকে কৃত্রিম ভাবে সচল রাখার জন্য ব্যাঙ্কগুলোকে বলা হয়েছিল যত খুশি ঋণ দিতে। তখন চোখ অন্যদিকে সরিয়ে রেখেছিল আরবিআই”।
Read the full story in English