গুজরাটের ভূজ এলাকার শ্রী সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটে ছাত্রীদের অন্তর্বাস খুলে ঋতুস্রাব না হওয়ার প্রমাণ দেওয়া নিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকেছে গোটা দেশ। গোটা ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রানিঙ্গা, হস্টেল কো-অর্ডিনেটর অনিতা চৌহান, হস্টেল সুপারভাইজার রামিলাবেন এবং পিওন নয়নাবেনকে আটকও করে পুলিশ। কিন্তু বর্বর এই ঘটনায় অস্বস্তি যাঁদের গ্রাস করে রেখেছে, সেই কলেজের ১৯ বছরের কর্মাস বিভাগের ছাত্রীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) মন্তব্যে ধরা পড়ল এমনই এক সমাজচিত্র।
আপনি একটু বিস্তারিত বলুন যে সেদিন কী হয়েছিল?
প্রথমে নিয়ম ভাঙার জন্য অধ্যক্ষ আমাদের গালিগালাজ করলেন (ঋতুস্রাবরত শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন হয়ে সাধারণ ডাইনিং হল এবং পাশাপাশি প্রার্থনার ক্ষেত্রগুলি থেকে দূরে রাখা হয়)। আমরা যদি এই পরিদর্শন করতে রাজি না হই তবে আমাদেরকে রাস্টিকেট করার হুমকি দেওয়া হয়। আমরা এরপর বাথরুমে যাই এবং পোশাক খুলি যাতে পিওন তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এর আগে কখনোই এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি আমাদের। আমরা ভেবেছিলাম ঋতুস্রাব রেকর্ড করার জন্য এমন করা হস্টেলের নিয়ম। (যদিও কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয় এমন রেকর্ডের কথা তিনি জানেন না)।
কেন এলেন তাহলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে?
আরও ভাল কলেজে পাঠানোর সামর্থ্য নেই আমার পরিবারের। তারা চায় না যে আমি আরও দূরে গিয়ে কো-এডে পড়াশোনা করি। এখানকার অনেক পরিবার একই রকম ধারণায় বিশ্বাসী। অষ্টম শ্রেণির উপরের শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে থাকা বাধ্যতামূলক। আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন কারুর সঙ্গে আমার ঋতুচক্র নিয়ে আলোচনা করতে অস্বস্তি হচ্ছিল। যখন কারুর ঋতুস্রাব হয় তখন সবার নজর ওইদিকেই থাকে। সবাই জানতে পারত কারণ আপনি সেই সময়ের জন্য অশুদ্ধ। আপনাকে বেসমেন্ট এ থাকতে হচ্ছে। আলাদাভাবে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছি।
কোনও মহিলা স্টাফের সমর্থন পেয়েছিলেন এই ঘটনার পর?
না। এখানে ট্রাস্টিরা সকলেই পুরুষ। তাঁরা আমাদের কোনও অভিযোগ কানেই তুলত না। বরং আমাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলত। আমরা তাঁদের বলে গিয়েছি যে আমরা যারা তাঁদের স্বামীনারায়ণ সমাজের নই, তাঁদের এই ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান দিতে রাজি নই।
আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার এই ঘটনায় কী বলছেন?
তাঁরা মনে করেন যে ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে যা হয়েছে তা ভালো। একটি পরিবার আমার বাবা মা-কে এই প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার জন্য বলেছেন। তাঁরা বাবা মা কে বুঝিয়েছেন যে এই ঘটনাটি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং চেকিংয়ের বিষয়টিও মহিলারা করেছেন। তাই এটি কোনও বড় বিষয় নয়। বাড়িতেও মহিলাদের ঋতুস্রাব হলে মন্দির ঘুরে দেখার বা প্রার্থনার করার অনুমতি নেই।
আপনি কী চান যে এখান থেকে সব ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে?
আমি আমার স্নাতক পর্ব শেষ করতে চাই। এখনই আমার পরিবার আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করছে না। শর্ত সাপেক্ষে আমাকে পড়াশুনোর স্বাধীনতা দিয়েছেন। এই ধরণের নিয়ম ভাঙার জন্য সাহসী এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া এখন আমার একান্ত বিষয়।
Read the story in English